রাইসা ও রাইনা দুই কন্যা সন্তানের মা রাবেয়া মিতু। নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার বাসিন্দা। স্বামী গণমাধ্যমকর্মী হাসান উল রাকিব। ঘর,সংসার আর পরিবারের সবকিছু সামলিয়ে মিতু এখন একজন উজ্জল নারী উদ্যোক্তা। অসংখ্য গ্রাহকের কাছে প্রতিদিন পৌঁছে দিচ্ছে তাদের চাহিদা মোতাবেক পণ্য।
শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলা নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে রাবেয়া মিতুর নিরাপদ খাদ্যপণ্য, তৈরী পোষাক, নারীদের ব্যবহারের গহনা। রাইডারের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি ছাড়াও কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় এসব জিনিস পত্র। মিতুর প্রতিষ্ঠান প্রজাপতি ফুড এন্ড ফ্যাশনের (ফেসবুক ফেইজ) মাধ্যমে গ্রাহকরা পণ্যের অর্ডার কওে থাকেন।
বিশ^স্ততার (কথা ও কাজের মিল অনুযায়ী) সাথে এসব পণ্য পেয়ে গ্রাহকরা অনেক খুশি। গ্রাহকদের সন্তুষ্টি মিতুকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনেক দুর। একজন নারী উদ্যেক্তা রাবেয়া মিতুর স্বপ্ন আরো অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া। নারীদের জন্য মিতু এখন অনুপ্রেরণা নাম।
রাবেয়া মিতু কিভাবে নারী উদ্যোক্তা হলেন,তা খোজ নিয়ে জানা গেছে চমকপ্রদ তথ্য। মুলত একটা সময় অনলাইনে কেনা কাটা করে প্রতারনার শিকার হন মিতু। সেই থেকে মনে জেদ ধরেন তিনি। নিজেই শপথ নেন এ প্রতারনার জবাব দিবেন।
এজন্য তিনি এক রকম শপথ নেন মানুষকে ধোকা দিয়ে নয়, মানুষের সাথে বিশ^স্ততার মাধ্যমে কথা ও কাজে মিল রেখে পন্য বিক্রি করবেন। যাতে মানুষ প্রকৃত সেবা পায়। মানুষের কষ্টের টাকায় যেন ভালো পণ্য সহজ দামে পেতে পারে সেজন্য তিনি কাজ শুরু করেন।
মিতু জানান, ২০২০ সাল করোনাকালিন সময় তখন বাসার বাইরে বের হতে পারিনা। কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস তো লাগবে। সে সময় অনলাইন প্রসার পেয়েছে। কেনাকাটা অনলাইন থেকেই করি তবে দুঃখের বিষয় বেশির ভাগই ঠকে যাই। দেখায় এক রকম পাঠায় আরেক রকম। সবচেয়ে বড় ধরা লোকশান) টা খাই ঈদে ২০,০০০ টাকার শপিং করে। তারপর মনের মধ্যে জেদ চাপে যে অমি নিজেই বিজনেস করবো এবং মানুষকে অবশ্যই ভালো পন্য দিবো।
মিতু জানান, মাত্র ৩০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে পন্য বিক্রি শুরু করি। এখন প্রায় ৫০০০০ হাজার টাকা পুঁজি এবং ৬ জনের একটা টিম আলহামদুলিল্লাহ। এ পর্যন্ত কত গ্রাহকের কাছে পন্য পৌছানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
মিতু বলেন, আলহামদুলিল্লাহ নারায়ণগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের বাইরে বিভিন্ন জেলা এমনকি দেশের বাইরেও আমার পন্য যায় এবং রিপিট ক্রেতা হয়েছেন অনেকেই।আমার রেগুলার ক্রেতা অনেক। যারা ভালো পন্য পেয়েছে বলে আমার থেকেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে থাকেন।
তিনি বলেন, গ্রাহক একটা পন্য নিয়ে যখন সন্তষ্টি প্রকাশ করে এবং এর পরেও আবার অর্ডার করে, আত্মীয় স্বজনকে রেফার করে তখন সত্যিই মনটা ভালো হয়ে যায়। মনে হয় আমি ঠিক পথেই আগাচ্ছি। আমার পরিশ্রম তখন সার্থক হয়।
মিতু বলেন, ঘর, সংসার, সন্তান, পারিবারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকেই আমার ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেল করতে হয়, মেসেজের রিপ্লাই দিতে হয়, বায়ারদের সাথে কথা বলতে হয়,মূল সোর্স থেকে পন্য কালেক্ট করতে হয়,এবং যাচাই, বাছাই করে তারপরের ক্রেতার জন্য প্রস্তুত করতে হয়।
এটাকে আমি আমার কাজ মনে করি তাই এর জন্যও আমার সময় বের করতে হয়। বিশেষ করে রাতে পরের দিনের পরিকল্পনা করে রাখতে হয়,কাজ গুছিয়ে রাখতে হয়।
তিনি বলেন, আমার কাজের পরিধি আগের চেয়ে বেড়েছ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের মানুষ চাইলেই যখন তখন বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত খাবারের স্বাদ নিতে পারেনা। গ্রামের মা চাচিদের হাতে বানানো, সরাসরি কৃষকদের থেকে, নামিদামি কারখানা থেকে নিজের লোকের তত্বাবধানে খাবার আনাই।
নারায়ণগঞ্জ বাসীর কথা মাথায় রেখে। ভবিষ্যতে নিজের ছোট্ব করে হলেও একটা দোকার দেয়ার ইচ্ছা যাতে ক্লায়েন্ট সরাসরি যেটা পছন্দ সেটা নিতে পারে।
তৈরী পোষাক ও নারীদের ব্যবহৃত গহণা ছাড়াও মিতুর প্রতিষ্ঠান প্রজাপতি ফুড এন্ড ফ্যাশন এর নিরাপদ খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে আঁশযুক্ত/ফাইবার সমৃদ্ধ আইটেম: যবের ছাতু,যবের আটা,হাতে ভাজা মুড়ি, আমনের খই, আমনের লাল চিড়া,লাল চাল, লাল আটা, চালের গুড়া ১৫০ টাকা কেজি
গুড় বা মিঠাই আইটেম ঃ সিজনাল আখের ঝোলা/পাটালি গুড়,গোলপাতার গুড়,খেজুরের দানাদার ঝোলা/পাটালি গুড় তালের গুড়
দুগ্ধ আইটেম ঃ দেশি গাভির দুধের পরিমান বেশি খাঁটি দানাদার প্রিমিয়াম ঘি,স্বরের প্রিমিয়াম খাঁটি দানাদার ঘি প্রিমিয়াম গাওয়া দানাদার ঘি।
মধু সমাচারঃ প্রাকৃতিক চাকের মিশ্র ফুলের মধু ,প্রাকৃতিক চাকের বড়ই/মিশ্র ফুলের মধু, প্রাকৃতিক চাকের লিচু/কালজিরা/মিশ্র ফুলের মধু, ক্ষুদে বা ছোট মাছির মধু,সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু,প্রাকৃতিক চাকের চাক সহ মধু,লিচু ফুলের মধু,সরিষা ফুলের মধু, সরিষা ফুলের প্রসেসকৃত মধু,কালোজিরা ফুলের মধু ,পাহাড়ি ফুলের মধু ।
তেল আইটেমঃ কাঠের ঘানি ভাঙ্গা সরিষার,এক্সপেলার মেশিনে ভাঙানো তেল ,কালোজিরার তেল,এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল,গ্রেড ভার্জিন নারিকেলের তেল ৫০০মিলি ৫৫০টাকা,তিলের তেল,বাদামের তেল, তিশির তেল।
বাদাম আইটেম ঃ আখরোট, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, সাদা তিল, চায়না বাদাম, গোল্ডেন কিসমিস আফগান লম্বা কিসমিস সাগুদানা।
নিরাপদ মশলা আইটেমঃ মরিচের গুড়া,হলুদের গুড়া,জিরার গুড়া,ধনিয়ার গুড়া,কাঁচা হলুদের গুড়ো,গরম মসলার গুঁড়ো ।
মিস্টি ও দুধ : বগুড়ার বিখ্যাত স্বর দই, বাটার/মাখন, দুলাল চন্দ্র ভরের অরজিনাল তালমিস্ত্রি।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে মিতু বলেন, গ্রাহকদের উদ্যেশে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেখতে এক রকম হলেই সব পন্য এক হয় না। তাহলে দামের তারতম্য হতোনা। ভালো পন্য তৈরিতে যেমন সম্পূর্ণ ভালোটা ব্যবহার হয় তাই দাম তার একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই দেখে, শুনে, বুঝে কিনুন।