১৯৮৭-৮৮ সালে ৫৮ দশমিক ৫২ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্পনগরী। প্রথমে এটি হোসিয়ারি পল্লী হিসেবে গড়ে উঠলেও কালের পরিক্রমায় এটি পরিপূর্ণ গার্মেন্টস পল্লী হিসেবে রূপ নেয়। বর্তমানে বিসিকে প্রায় ৫০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন এই সেক্টরটি ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রায় সময়ই হয়ে উঠে অশান্ত। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা নেহাত কম নয়। যদিও অশান্ত হয়ে উঠা এই সেক্টরটি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বিসিকে ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতে পক্ষ-প্রতিপক্ষ রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে, কে কখন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঝুট নামায় এগুলোতো আমাদের জানা নেই। কার ঝুট কে নিয়ে যায়! সম্প্রতি একটি অভিযোগ পেয়েছি, ওই অভিযোগে মামলাও হয়েছে। এজাহারে উল্লেখিত দুই আসামীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাই ঝুট সেক্টরে কেউ যদি প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে, তাহলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেব। বিসিক শিল্পনগরীতে যেন, ব্যবসায়িরা শান্তিপূর্ন ভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য আমরা তৎপর রয়েছি। যারা অপরাধ করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবেই।’
জানা গেছে, ফতুল্লার বিসিকে ঝুট সন্ত্রাসীরা বেপেরোয়া হয়ে উঠেছে। গার্মেন্টেসের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন নিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটিয়ে চলেছে সংঘর্ষের ঘটনা। ক্ষমতাসীনদের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি মহল অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিসিকে একাধিক গ্রুপ আধিপত্য চালিয়ে আসলেও বর্তমানে এই সেক্টরটি নিন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী তেলচোরা পাভেল ও মির্জা বাবু গ্রুপ। প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাসদাইর ও আশপাশের এলাকায়। ঝুট সেক্টরে আধিপত্ত বিস্তার করতে তারা গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী বাহিনীও। বৈধ উপায়ে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের উপরও হামলা চালানোর অভিযোগে থানায় মামলাও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মির্জা পাবেল গ্রুপ মালিক পক্ষকে ন্যায্য মুল্য না দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে ঝুট মালামাল নামিয়ে নেয়। তারা মালিক পক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ভীতি স্থাপন করতে এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এই বাহিনীতে অশান্ত হয়ে উঠছে ফতুল্লার শিল্প নগরী বিসিক।
জানা গেছে, সন্ত্রাসী মির্জা পাবেল, তার ভাই মেজর বাবু, তাদের সহযোগি ঝুট সন্ত্রাসী বাহাদুর ও তার দুই ছেলে সহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন সম্প্রতি মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে মালামাল ও নগদ টাকা লুটে নেয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় মির্জা পাবেল ও তার ভাই মেজর বাবুকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হলেও মামলার অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামীদের এখনো আটক করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবেল বাহিনীর সাথে রয়েছে ঝুট সন্ত্রাসী ইসলাম, মাসাইর এলাকার বাহাদুর, জুয়েল ওরফে বেয়াদপ জুয়েল, রিপন, নুর ইসলাম, ইকবাল শেখ, আনোয়ার প্রমুখ। তারা এলাকায় প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। এমনকি হুমকিও দিচ্ছে মালিকপক্ষ সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের। ফলে তাদের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই মালিকপক্ষ ও অন্যান্য সাধারণ ঝুট ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
সবশেষ গত ২৮ এপ্রিল ফতুল্লার পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন আরবি নীট ওয়্যার থেকে ঝুট নামানোকে কেন্দ্র করে মির্জা পাভেল গ্রুপ সশস্ত্র হামলায় চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। মালামালও ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় সন্ত্রাসী মির্জা পাবেল ও তার ভাই মেজর বাবুকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের তৎপর রয়েছে।
আরও পড়ুন :ফতুল্লায় কিশোর সন্ত্রাসী ইভনকে গণধোলাই