দেখে মনে হবে কোন সমাবেশ চলছে। শত শত নারী-পুরুষ প্রখর রৌদে খোলা মাঠে দাড়িয়ে আছে ঘন্টার পর ঘন্টা। ভেপসা গরমে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছে নিরাপদ দুরুত্বে। আবার কিছুটা দম নিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৭ নাম্বার ওয়ার্ডের জিমখানা মাঠের। সকাল ৭টা থেকে করোনার টিকা নেয়ার জন্য তারা এখানে জড়ো হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা দেড়টায় সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। শেষ পর্যন্ত টিকা না বেলা ২টায় টিকা দেয়ার কার্যক্রম সমাপ্তি করেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ফিরে যান অনেক নারী-পুরুষ।
টিকা দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার শেষ সময়। আগামীকাল শুক্রবার (২৫ ফেব্রæয়ারি) টিকার দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। শনিবার প্রচন্ড ভীড় হবে। তখন যদি দিতে না পারি তাহলে কি করবো? আজকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকা দেয়ার কার্যক্রম এবং শুক্রবারও যাতে মানুষ টিকা দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
শুধু জিমখানা মাঠ নয়, নাসিকের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একই চিত্র লক্ষ করা গেছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালেরও উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে। ভেপসা গরমে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ভেতর চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে টিকা নিতে আসা লোকজন। সেখানে কেউ প্রথম ডোজ, কেউ দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ নিতে আসেন। শৃংখলা না থাকায় নানা ভোগান্তি ও হয়রানীর শিকার হয়েছে তারা। অনেকে না বুঝে প্রথম ডোজ দেয়ার জন্য দ্বিতীয় যোজের লাইনে দাড়িয়েছেন। দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকার পর তাকে বলা হয়েছে এটা দ্বিতীয় ডোজ যারা দিবে তাদের লাইন। আবার কেউ বুস্টার দিতে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজের লাইনে দাড়িয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারো কারো মেসেজ না আসায় তারাও লাইনে দাড়িয়ে মেষ পর্যন্ত টিকা না দিয়েই ফিলে গেছেন। তাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু শনিবার (২৬ ফেব্রæয়ারি) টিাকা দেয়ার শেষ সময়। এবং শুক্রবার বন্ধ। তাই মেসেজ এর অপেক্ষায় থাকলে তো চলবে না।
১৪ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমেনা খাতুন (৪৮) জানান, ১৫/২০ দিন আগে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। কিন্তু মেসেজ আসে নাই। আমাকে বলেছে মেসেজ না আসলেও টিকা দেয়া যাবে। তাছাড়া প্রথম ডোজের সময়ও শেষ হয়ে আসছে। তাই আসলাম। কিন্তু কয়েকঘন্টা অপেক্ষা করার পরে তারা বলে মেসেজ না আসলে টিকা দেয়া যাবে না।
অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তথ্যকেন্দ্র না থাকায় অনেক মানুষকে ভুল লাইনে দাড়িয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে টিকা নিতে আসা আমজাদ হোসেন বলেন, একবার বলে জিমখানা মাঠে যান। সেখানে যাওয়ার পর বলে হাসপাতালে। হাসপাতালে আসার পর বলে, বাইরে লাইন ধরেন। এই যে ভোগান্তি, যদি তথ্যকেন্দ্র থাকতো তাহলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।
এদিকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে টিকার কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রথম ডোজ দেয়ার সময় ফুরিয়ে আসার কারণে বহু লোকজন টিকা নিতে এসেছে। তার উপর দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ নিতে আসা লোকজন সব মিলিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সরকার শুক্রবারও টিকা দেয়ার কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আসা করি চাপ কমে আসবে। এবং সবাই টিকার প্রথম ডোজ দিতে পারবে।
তারা আরও বলেন, নাসিকের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে গণটিকা দেয়ার কার্যক্রম চললেও বহু মানুষ হাসপাতালে চলে এসেছে। ফলে তারা একটু বিড়ম্বনায় পড়েছেন।