বন্দরের ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্ধা বিক্রম শাহ ঘুরে ঘুরে কাজ করেন মুচি হিসেবে। প্রতিদিনের আয় দিয়ে চলে তার টানাটানির সংসার। গত বছরের মার্চে করোনা শুরুর পর থেকেই তার কাজ প্রায় বন্ধ। করোনায় সংক্রামণ হ্রাসে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর আশার কিঞ্চিৎ আলো পেলেও কঠোর লকডাউনে বিক্রম শাহ’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে বিক্রম শাহ বলছিলেন, ‘‘গেল বছরের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারিনি। যে ধার করেছিলাম সেটা এখনও শোধ হয়নি। এখন আবার সবকিছু বন্ধ করে দিছে? বাপ-দাদার কোন সম্পত্তি নাই যে গ্রামে চলে যাব।’’ কোন সহায়তা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, “ কে করব আমাগো সাহায্য? কেউ একটা পয়সাও দেয়নি।’’ সামনের দিনগুলো নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বিক্রম শাহ ।
শুধু বিক্রম শাহ নন, এমন অসংখ্য নিম্নআয়ের মানুষ কঠোর লকডাউনে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। কাজ বন্ধ হয়ে গেলে কীভাবে খাবার জুটবে সেটা নিয়েই চিন্তা তাদের৷ খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিয়ে কি মানুষকে ঘরে বন্দি রাখা যাবে? এ বিষয়ে মানুষের মাঝে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলেও না খেয়ে মরতে চাইবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে বিপর্যয়ের শঙ্কা আরো বাড়বে। অধিকাংশ দিনমজুরের এখন তেমন কাজ নেই। কঠোর লকডাউনের ফলে কর্মহীন অলস সময় পার করছে পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে সংসারের অভাব-অনটনে অর্ধহারে-অনাহারে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। কালিবাজার চারারগোপ এলাকায় রিকশা নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে আছেন শাকিল। বৃদ্ধা নানু ও তার মাকে নিয়েই তার সংসার। লকডাউনের কারণে নানান সড়কে যাত্রী না পেয়ে, এখন ক্লান্ত তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,“লকডাউন দিছে দিন মুজুরের মারার জন্য, খাইয়া আছি নাকি পাথর পেটে চাপা দেই কেউ জানে না।
তার সাথে কথা বলতে বলতেই চোখে পড়ে ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধার দিকে। চারাগোপ ফলের বাজারের পাশের সড়কে কাঁঠালের বিচি কুড়োচ্ছেন। একটু কাছে গিয়ে দেখা যায় তার পলিথিনের ব্যাগে অল্প সংখ্যক কাঁঠালের বিচি। কথা বলে জানা যায়, অচল ছেলে ও তার পরিবারের দেখাশোনা তিনিই করেন। মানুষের থেকে সাহায্য নিয়েই তাদের আহারের ব্যবস্থা করেন। সড়ক থেকে কাঁঠালের বিচি কুড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন, “করোনা নাকি বাড়ছে। মানুষ রাস্তায় বের হয়না। বাসায়ও ঢুকতে দেয় না। সাহায্য করে না কেউ। ঘরে টাকা নাই। বিঁচি রাইন্ধা খামু।”
প্রায় একই গল্প কথা শোনা যায় ৫ নং ঘাট এলাকা মাঝি দাদনের কাছে। নৌকার সঙ্গে তার জীবিকা বাঁধা থাকায় আটকে গেছে জীবিকার পথ। লকডাউনে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় সামান্য আয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “যাত্রী নাই, নৌকার ভাড়া হয়না, ইনকাম হইবো কেমনে? যা কামাইতাছি ওইটা ঘরের ভাড়া দেওন লাগব। তিনবেলা ডাল-ভাত খামু সেই পরিস্থিতিটাও নেই।”
কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের সঞ্চয় ইতিমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজের নানা স্তরে। মানুষের মনে বিরাজ করছে অস্থিরতা। অনেকেই আবার অভাব-অনটনে পড়ে জীবিকার তাগিদে বেছে নিচ্ছেন অসৎ পথ।