সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করে রেখে গেছে তার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন এখনো হয় নাই। দেশে সকল ধর্মের, সকল মত ও পথের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এখনো বাধা রয়েছে। দেশে অর্ধ-শতাধিক মাজার ও খানকা ভাঙ্গা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় লালন অনুসারিদের মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, পাঁচ শতাধিক চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়া, সতের হাজার আহত হওয়ার বাংলাদেশ বিচার হীনতার বাংলাদেশ হতে পারে না।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে রোববার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, সিপিবি শহর সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, বাসদ জেলা সংগঠক এসএম কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে এগার বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকার বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে যেমনি প্রশ্ন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে ঘাতক ওসমান পরিবারের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আজকে পরিবর্তীত বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারদের পুরুত্থান মানবো না। নারায়ণগঞ্জে বিগত পনের বছর ওসমান পরিবারের লুটপাটের সহযোগীরা এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়েছে, কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা ত্বকী হত্যার এক যুগের কাছে দাঁড়িয়ে ত্বকী, সাগর-রুনি, তনু সহ নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সকল হত্যার বিচার চাই।
মাহবুবুর রহমান মাসুম প্রশ্ন রেখে বলেন, ওসমার পরিবার পালিয়ে যায় কী ভাবে? তার দোসররা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল থাকে কী ভাবে? তাদের দোসররা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল থেকে ওসমান পরিবারকে সহায়তা করে যাচ্ছে। শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের কাছ ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচার চাই।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।