নারায়ণগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ও সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবকতা বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সভা কক্ষে কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়াত এডুকেশন’র আয়োজনে ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কমিউনিটি ভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার কার্যক্রমের সাথে তাদের সক্রিয় করতে এবং প্রকল্পের কল্যাণমূলক কাজে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আয়াত এডুকেশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সুমিত বণিক এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ’র ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. হাসান হাফিজুর রহমান, পিসিএ নাদিয়া সুলতানা, কমিউনিটি মবিলাইজার অনন্যা রহমান। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ও মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পে ভলান্টিয়ারদের গুরুত্ব বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন এ্যাসিস্টট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার সারওয়ার আলম।
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সুমিত বণিক বলেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণ ব্যতীত একটি মমতাময় সমাজ বা কমিউনিটির কল্পনা করা অসম্ভব।
আর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের এই দক্ষতা বা জ্ঞান শুধুমাত্র রোগীদের জীবনেই কাজে লাগে তা নয়, এটি নিজের পরিবারে স্বজনদের মধ্যে কেউ অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে, তখন তাদের জীবনেও উপকারে আসে। আমরা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের এই রোগীদের পাশে থাকার মাধ্যমে যেমন তাদের জীবনে প্রশান্তি এনে দিতে পারি, তেমনি বিনামূল্যে সেবা প্রাপ্তির এই সুযোগকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে পারি।
মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. হাসান হাফিজুর রহমান স্বেচ্ছাসেবকদের প্রকল্পের কাজের সাথে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার এ্যাসিস্ট্যান্টদের (পিসিএ)দের সাথে রোগীদের বাসায় গিয়ে সেবা দিয়ে থাকেন, কিন্তু এটিকে স্থায়িত্বশীল রূপ দেয়ার জন্য প্রয়োজন স্বেচ্ছাসেবকদের নিজেদের উদ্যোগেই রোগীদের পাশে থাকা এবং রোগীদের সেবার জন্য এগিয়ে আসা’।
আয়াত এডুকেশনের এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার সারওয়ার আলম প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ভলান্টিয়ারিজমের গুরুত্ব তুলে ধরে তার বক্তব্যে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে ভারতের কেরালা মডেলের উদাহারণ টেনে বলেন, ‘কেরালাতে ভলান্টিয়াররা ইতোমধ্যে যে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করে ফেলেছে, সেটা আমরা এখনও উদ্যোগই নিতে পারিনি।
এই ক্ষেত্রে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। তিনি আরও বলেন, ‘ প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বার্তা সমাজ ও কমিউনিটির সর্বত্র পৌঁছে দেবার এখনই উপযুক্ত সময়। এটাকে সফল করতে হলে, ভলান্টিয়ারদের আরও সক্রিয় ও আন্তরিক হওয়ার বিকল্প নেই’।
পিসিএ নাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘যে সকল স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীদের বাড়ির আশেপাশে আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা যেসকল দিন রোগীদের বাড়িতে যেতে পারি না, সে সকল দিন তাদের বাড়িতে ভলান্টিয়াররা গিয়ে রোগী ঔষধটুকু ঠিক মতো খাচ্ছে কিনা, সেটা ফলো-আপ করতে পারেন, যে সকল রোগীদের দেহে ক্ষত আছে, তাদের বাসায় গিয়ে তাদের পাশ ফিরিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
পাশাপাশি যে সকল প্রতিবন্ধি শিশুরা আছেন, যারা কথা বলতে সমস্যা আছে, তাদের সাথে সময় কাটানো, অনেকে আছেন তারা পড়তে চায়, তাদেরকে পড়ানোতে সহায়তা করতে পারেন। বিশেষ করে স্ট্রোক-প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক ব্যায়াম বা নড়াচড়া করার ক্ষেত্রে সহায়তা করলে, এটি রোগীরা উপকৃত হবে ও আরামবোধ করে।
উল্লেখ্য যে, তিন বছর মেয়াদী ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ এই পাইলট প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে সংযুক্তিকরণ। নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু ভোগান্তি বিহীন, যন্ত্রনা বিহীন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা।
সেই সাথে প্রকল্পটি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক কষ্টগুলো কমিয়ে জীবনের গুণগত মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপনের পর উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দের কার্যক্রমগুলো মূল্যায়ণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং মুক্ত আলোচনা পর্বে এ সংক্রান্ত নিজেদের মতামত ও প্রশ্নগুলো তুলে ধরেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আয়াত এডুকেশনের কমিউনিটি মবিলাইজার মো. ফাহিম হেসেন, সংবাদকর্মী মো. ইমতিয়াজ আহমেদ, ইউসুফ আলী প্রধান, প্রভাষক মুখলেছ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, সমাজ কর্মী সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।