ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলায় ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে প্রেসক্লাবে গিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবন্দ। তারা হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং ঘৃনা জানিয়ে হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
একইসাথে, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব যাতে স্বাধীনভাবে তার সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে এজন্য সর্বদা পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার (০১ নভেম্বর) বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আসেন তারা।
এসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মনির হোসেন কাসেমী বলেছেন, প্রেসক্লাবের উপর যে নগ্ন হামলা হয়েছে তার ধিক্কার জানানো রাজনৈতিক দায়িত্ব, আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। গণতন্ত্র যদি তার আসল গতিতে চলতে না পারে, তাহলে বৈষম্যহীন সমাজ কিভাবে গঠন হবে? মিডিয়াকে যদি যদি স্বাধীণভাবে চলতে দেয়া না হয়, মানুষের বাক স্বাধীণতার উপরে যদি হস্তক্ষেপ করা হয়, তখন সে দেশে গণতন্ত্র পরিস্ফুটিত হয় না, মানুষও তার অধিকার পায় না, বৈষম্যও দুর হয় না। গণতন্ত্র তখনই পরিস্ফুটিত হবে যখন মিডিয়া উন্মুক্ত হবে, স্বাধীন হবে। এজন্য নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনাকে আমরা তীব্র থেকে তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি, ঘৃনা জানাচ্ছি এবং হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমি কোনো দলের নাম উচ্চারণ করলাম না, যে দলেরই নাম ব্যবহার করা হোক না কেন এ ধরনের হামলার পিছনে যারা ইন্ধন দিয়েছে তারা নিজেরাই সাবধান হোন। দ্বিতীয়বার যাতে আর কেউ এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ও গর্হিত কাজ করার হিম্মত না দেখায় বা দু:সাহস না দেখায়। যে কেউ এখানে এসে পাকা আম দেখে বানরের ভেসকি মারবেন, আর সেই পাকা আম পড়ে যাবে, এতোটা নড়বড়ে নয় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলাম সহ যত ইসলামী-অনৈসলামীক, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, জাতীয়-স্থানীয় সংগঠন আছে, সকল সংগঠন আপনাদের পাশে আছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি সুস্থ থাকেন, গণতন্ত্র সুস্থ থাকবে। অতএব, যেভাবে আপনারা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন, সেভাবেই আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো ইনশ্আাল্লাহ। সরকারিভাবে বিচারালয়, থানা ও বেসরকারীভাবে প্রেসক্লাব হচ্ছে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এখানে কেউ অপকর্ম করার চেষ্টা করলে, আমরা তা মেনে নিবো না।
জামায়াতে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব একটি ঐহিত্যবাহী প্রেসক্লাব। এই প্রেসক্লাবে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলায় আমরা খুবই ব্যথিত হয়েছি, দুঃখ পেয়েছি। এটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘটনার পরপরই সারাদেশে যেভাবে প্রচার হয়েছে, এজন্য আমরা নারায়ণগঞ্জের ইজ্জত রক্ষার্থে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সাহেবের সাথে কথা বলেছি। একসাথে বসে কিভাবে এটার মিমাংসা করা যায়, এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা আজকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং অপরাধী যেই হোক, দু:স্কৃতিকারী যেই হোক, যে দলেরই হোক গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব স্বাধীণভাবে তার সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করবে, এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলাম সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
প্রেসক্লাব পরিদর্শন, আহত সাংবাদিকদের খোঁজ-খবর এবং প্রেসক্লাবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী’র নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সভাপতির বক্তব্যে প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম জেলার সহ-সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কামাল উদ্দিন দায়েমী, মহানগরীর সেক্রেটারী মাওলানা মীর আহমাদুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামী মহানগরীর নায়েবে আমির আব্দুল কাইয়ুম, সেক্রেটারী ইঞ্জিঃ মনোয়ার হোসেন, সহ-সেক্রেটারী জামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর সভাপতি আব্দুল মোমেনসহ ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাকন, কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ, মাহফুজুর রহমান, আফজাল হোসেন পন্টি, প্রেসক্লাব সদস্য নাহিদ আজাদ, এম আর কামাল, নাফিজ আশরাফ, ইমামুল হক স্বপন, হাসান উল রাকিব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর একটার দিকে ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হামলায় প্রেসক্লাবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ সহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় হামলার নেতৃত্বদানকারী মাসুদ রানা রনি নামে এক জনকে আটক করে পুলিশ। এ হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একাংশের ইন্ধন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, হামলার ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষে ক্লাবের ম্যানেজার মোঃ মাসুম বিল্লাহ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।