নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার উস্কানিদাতা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলাকারী হকার নেতা ও দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আসাদুল ইসলাম আসাদকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গ্রেপ্তারকৃত আসাদুল ইসলাম আসাদ সোনারগাঁয়ের বুরুমদী এলাকার মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি সনদ বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান। এরআগে বুধবার রাতে রূপগঞ্জের গাউছিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আসাদ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চাষাঢ়ায় চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার সহযোগী হকারদের নিয়ে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক, চাইনিজ কুড়ালসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এছাড়া তার উস্কানি ও মদদে সহযোগী হকাররা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে সাধারণ জনগণ গুরুতর আহত ও প্রাণহানির শিকার হয়।
র্যাব আরও জানায়, কয়েক বছর আগেও আসাদ সড়কের ফুটপাতে হকারি করতেন। এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে তিনি হকারদের নেতা হয়ে যান। পরে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হাঁকিয়ে নেন গ্রেফতারকৃত আসামি হকার নেতা আসাদ।
২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের ফুটপাত হকারমুক্ত করার যৌথ উদ্যোগের বিরোধিতা করে আন্দোলন করা নেতাদের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি হকারমুক্ত সড়ক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হকারদের নিয়ে হামলা করে জনগণ, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত করেন।
এরপর ২০২১ সালের ৯ মার্চ ফুটপাতে বসার দাবিতে বিক্ষোভ করেন হকাররা। ওই সময় হকারদের নেতৃত্ব দেয় আসাদ। ওই দিন বিকালে সড়কে আগুন দিয়ে যানবাহনে ভাঙচুর চালান হকাররা।
বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা, যানবাহন ভাঙচুর ও সড়কে আগুন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার হন আসাদ।
একই বছরের ১৪ অক্টোবর ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে তর্কের জেরে খুন হন ১৮ বছর বয়সি তরুণ জোবায়ের হোসেন। ওই তরুণও ফুটপাতে হকারি করতেন। তাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই হত্যা মামলারও আসামি এই আসাদ।
পরে নিহত জুবায়েরের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম এ ঘটনায় থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, নিজেকে হকার নেতা বলে পরিচয় দেওয়া আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় মূলত চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। ওই এলাকার সড়কের ফুটপাতে বসতে হলে আসাদকে দৈনিক চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার একটি অংশ সখ্য বজায় রাখা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন আসাদ।