সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৬ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এবং দুপুর ১ টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রস্তুতি সভায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে সকল পূজা মন্ডপ থেকে আগত পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত সকলের মতামত গ্রহণ করা হয়।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর নারায়ণগঞ্জ, ধর্মীয় ঐতিহ্যের শহর নারায়ণগঞ্জ। এখানে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করে, তাদের উৎসব পালন করে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্বিঘ্নে উদযাপন করবে সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
প্রতি ১০ টি মন্ডপে জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। কোনো প্রকার গুজবে কান দেবেন না, গুজব ছড়াবেন না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন, নিজস্ব ভলান্টিয়ার বাহিনী রাখবেন। কোন সমস্যা হলে মন্দির কমিটি, পূজা পরিষদ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, নিজ নিজ ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা পুলিশ সব সময় সর্তক রয়েছে। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলার সব সার্কেল ও থানার অফিসার ইনচার্জদের পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্তক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পূজাকে কেন্দ্র করে একটি সম্প্রাদায়িক গোষ্ঠী সম্প্রতিকে বিনষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক বা ইউটিউবের কোনো গুজব ছড়ানো চেষ্টা করবে। সেইসব গুজবে কান দিবেন। যদি কেউ কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে আমাদের সাথে স্কাইপিতে মিটিং করেছেন এবং নিজ নিজ এলাকায় পূজা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ইতিমধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে পূজা উদযাপন পরিষদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি।
পূজার দিনগুলোতেও আমরা নিয়মিত মনিটরিং করবো। প্রতিমা নির্মাণকালীন সময়ে কেউ যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উৎসবমুখর পরিবেশে এবারে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি এবং মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সকলকে আগাম শারদীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর প্রেরণ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করবে। ইতিমধ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। আমরা ইতিপূর্বে জেলা পর্যায়ে সকল পূজা মন্ডপ গুলোর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেছি।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি এবং তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সকলের সাথে সমন্বয় করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা আয়োজনে আমরা বদ্ধ পরিকর।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সকল ধর্মের সকল মতের মানুষ মিলেমিশে আনন্দ উৎসব ভাগাভাগি করে নেয়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপিসহ সকল দলের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নারায়ণগঞ্জে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেননি। এবারও আমরা নারায়ণগঞ্জের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে সাথে নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে চাই। আমাদের ভরসা নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় আমরা শারদ উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় আছি। সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর মেজর আয়াজ, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, র্যাব-১১ এর সিইও তানভীর মাহমুদ পাশা, নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ এ এফ এম মশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মাঈনুদ্দিন, মহানগর হেফাজত ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউস রহমান, মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হোসনেয়ারা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমলাপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম বাবুল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিতোষ কান্তি সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শংকর কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন, মহানগরের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার দাস, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি শংকর সাহা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন পালসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এবং মন্দির ও মন্ডপ প্রতিনিধিবৃন্দ।