নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সংঘর্ষে। এসময় ঘটনাস্থলের চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যান যানবাহন চলাচল। পরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের ১নং, ২নং রেল গেইট, টানবাজার ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ রোববার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সিটি বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব উল্লাহ তপন ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন রানার নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে শো-ডাউন দেয়া হয়।
এদিকে তপন-রানার গ্রুপের শোডাউনের খবরে দুপুর ২টায় কারাবন্দি জাকির খানের সমর্থিত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশ করে। এসময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষ লাঠিসোঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে পরিবহনের কাউন্টারে থাকা বাস মালিক রুহুল আমিনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পরিবহন কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়ে নেতাদের মারধর ও বন্ধন পরিবহনের কাউন্টার করা হয়।
এদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মারধর ও অফিস ভাংচুরের প্রতিবাদে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা।
খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে ধাওয়া করে ৮ জনকে আটক করে। এবং পরিস্থিতি শান্ত করে।
সংঘর্ষে আহত নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন জানান, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সিটি বন্ধন পরিবহনের স্থলে বন্ধন পরিবহন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এটা বন্ধন পরিবহনের দুই পক্ষের বিষয়, কিন্তু হঠাৎ শ্রমিকদের অফিসে হামলা ভাংচুর চালায় দুই পক্ষের লোকজন। এতে সড়ক পরিবহন নেতা দেলোয়ার হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম রক্তাক্ত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সিটি বন্ধন পরিবহনের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন লিটন ও এমডি দেলোয়ার হোসেন। অন্যদিকে বিলুপ্ত বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান হিসেবে মাহবুব উল্লাহ তপন রয়েছেন।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বন্ধন পরিবহন নাম পরিবর্তন করে সিটি বন্ধন পরিবহনের নামে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের চলাচল শুরু করে। এর আগে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতা মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভাই ও মহানগর বিএনপির সদস্য মাহবুব উল্লাহ তাপন বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি পরিবহন চাঁদাবাজ জুয়েল হোসেন বন্ধন পরিবহন বিলুপ্ত করে সিটি বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান হন। পরবর্তীতে পরিবহনের এমডি ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরেক চাঁদাবাজ আইয়ূব আলীর নিয়ন্ত্রণে বাস চলাচল করে। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকেই বিএনপির দুই পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রুপ পরিবহনটি দখলের চেষ্টা চালাতে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নিজের শক্ত অবস্থান ধরে রাখার জন্য বন্ধন পরিবহনের ২ গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সকালে এক গ্রুপের সঙ্গে আলোচনার জন্য বসেছিলাম। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছিলো। কিন্তু পরে আরেক গ্রুপ এসে ধাওয়া দেওয়ায় আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ এবং সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাজ করেছে। যৌথবাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বতর্মানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।