নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে ও শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদ শেখকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে তোলা হয় জামশেদকে৷ এ সময় ব়্যাব ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে এবং বিপরীতে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন৷ শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷
এরআগে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর পৌনে পাঁচটায় ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ত্বকী হত্যার সঙ্গে জামশেদ শেখের সরাসরি যোগ রয়েছে।
এর আগে ত্বকী হত্যার ঘটনায় সাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও কাজল হাওলাদার নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আজমেরী ওসমানের পাশাপাশি র্যাবের তদন্ত তালিকায় তাদেরও নাম ছিল। বর্তমানে রিমান্ডে এনে তাদের র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ত্বকী। পরদিন তার 'এ' লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী সারাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিলেন। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ত্বকীর লাশ উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই বছরের ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন।
পরে রফিউর রাব্বির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে।
২০১৩ সালের ৭ আগস্ট আজমেরীর 'উইনার ফ্যাশন' অফিসে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিন্স, একটি পিস্তলের বাট এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করে র্যাব। ওই সময় র্যাব কর্মকর্তারা দেয়াল, সোফা ও আলমারীতে বেশকিছু গুলির চিহ্নও দেখতে পান।
এদিকে র্যাবের ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ত্বকী হত্যাকাণ্ডে ১১ জন অভিযুক্তের প্রত্যেকের ভূমিকার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়।
আজমেরী ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা হলেন, ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন ও জামশেদ হোসেন।
র্যাব অভিযুক্ত লিটন, ভ্রমর, জ্যাকি এবং সন্দেহভাজন হিসেবে রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেপ্তারও করে। তবে সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: ত্বকী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ জন রিমান্ডে
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছরের জুলাই এবং নভেম্বর মাসে যথাক্রমে লিটন এবং ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে ভ্রমর আদালতে জবানবন্দিতে তার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আবেদন জানিয়েছিলেন। ভ্রমর ও লিটনসহ এই মামলার সব আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে বর্তমানে পলাতক।