স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সাথে রাজউক কর্মকর্তারা যোগসাজসে চাষাড়া বালুরমাঠের জমি বিক্রয়ের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত চাষাড়া বালুর মাঠে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি এড. এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জেষ্ঠ সহসভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সমমনা সামাজিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ।
সমাবেশে রফিউর রাব্বি বলেন, রাজউক, রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ, রোডস এন্ড হাইওয়েসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জায়গা এ সব প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তারা স্থানীয় ভূমিদস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের সাথে আতাত করে বিভিন্ন সময় বিক্রি করে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে জায়গার অভাবে যেখানে বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ নগরের অনেক প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাচ্ছে না সেখানে চলছে অবাধে ভূমি লুটপাট। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় নারায়ণগঞ্জে একদল মাফিয়াগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যার সাথে যুক্ত হয়েছিল দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী এবং এ সব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ আমলা কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার শত শত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, মাদক-ব্যবসায়িদের নিয়ে একটি মাফিয়া চক্র গড়ে তুলেছিল। গোটা নারায়ণগঞ্জকে জিম্মি করে একটি ভয়ের নগরি তৈরি রেখেছিল এ চক্রটি। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর এ চক্রের কেউ কেউ পালিয়ে থাকলেও এখন আবার একে একে বেরহয়ে আসছে।
স্বৈরাচারের সকল সহযোগীকে আইনের আওতায় না এনে রাষ্ট্র-সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আজকে পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে আমরা রাজউকের বিক্রিতভূমি পূনরুদ্ধার এবং জনস্বার্থবিরোধী এই লুটপাট প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত মন্ত্রী, এমপি ও রাজউকের অসাধুকর্মকর্তার নাম প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, বিচার চলমান থাকা অবস্থায় জমি বিক্রয় সম্পূর্ণ অবৈধ। এ সময়ে সম্পাদিত সকল দলিল অবৈধ। যার ফলে রাজউকের সম্পাদিত এবং তাদের কাছ থেকে কিনে পপুলারকে সম্পাদিত করে বিক্রয় করা সকল দলিলই আইনত অবৈধ। তিনি দ্রুত এই দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন গডফাদার শামীম ওসমানের বাহিনীর সকলকে আজকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আওলাদ হোসেন মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পপুলারের দখলে থাকা জমি দ্রুত অবমুক্ত করার এবং সেখানে কোনরূপ স্থাপনা নির্মাণ না করার দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ পনের বছর শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমান, শ্যলক, বেয়াই সহ শাহ নিজাম, খালেদ হায়দার খান কাজল গংরা নারায়ণগঞ্জে রাম রাজত্ব কায়েম করেছিল।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, “জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজউক নারায়ণগঞ্জ শহরের ২৪.১৮ একর ভূমি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণকৃতভূমিতে সে সময় রাজউক ৬ টি ডিআইটি বিপনী বিতান তৈরি করলেও বাকী সমস্ত ভূমি অব্যবহৃত রেখে দেয়। পরে রাজউক চাষাঢ়া, খানপুর ও বঙ্গবন্ধু রোডের অধিগ্রহণকৃত ভূমি প্লট তৈরি করে এবং বিভিন্ন সময় তা বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন অনুযায়ি, যে উদ্দেশ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যে তা ব্যবহৃত না হলে সে ভূমি কোনভাবে বিক্রয়, লিজ, এওয়াজ-বদল বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। অথচ আমরা দেখছি রাজউকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণকৃতভূমি আইন বহির্ভূত ভাবে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সাথে আতাত করে বিক্রয় করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে রাজউক নারায়ণগঞ্জের ভূমি বিক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। সে সময় নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি ও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ২০০৪ সালে রাজউকের অধিগ্রহণ করা ভূমি ও ডিআইটির ৬টি বিপনী বিতান ফিরিয়ে দেয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। যে মামলা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
কিন্তু মামলা চলমান থাকা অবস্থায় এবং অধিগ্রহণ আইন অমান্য করে রাজউক গোপনে ২১-০৯-২০১৭ তারিখে নারায়ণগঞ্জে ভূমি-সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত খালেদ হায়দার খান কাজলের কাছে বালুর মাঠের ১৯.৫০ শতাংশ ভূমি ৫৭৭৬ নং দলিলের মাধ্যমে ৮.৭৭ কোটি টাকায় এবং ২২-১১-২০১৬ তারিখে নুপুর কুমার ভৌমিকের কাছে ৬৫৬৩, ৬৫৬৭ ও ৬৫৬৯ নং দলিলের মাধ্যমে ৫৬.৬৯ শতাংশ ভূমি ১৭.০১ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে ২৩-০৫-২০১৮ তারিখে খালেদ হায়দার খান কাজল ৩৩৫৮ নং দলিলের মাধ্যমে ১৪.০০ কোটি টাকায় এবং ১৯-০৩-২০২০ তারিখে নুপুর কুমার ভৌমিক ২২৮৩ নং দলিলের মাধ্যমে সে সমস্ত ভূমি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে যথাক্রমে ১৪.০০ কোটি টাকা ও ২৭.৪৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়।