ঈদের ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৭ জুনের মধ্যে শ্রমিকের বেতন, পূর্ণ ঈদ বোনাস ও সমস্ত বকেয়া পরিশোধ, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, শ্রমিকদের রেশন, স্বল্পমূল্যে আবাসন, বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
শুক্রবার (২৪ মে) সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহসভাপতি হাসনাত কবীর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, গাবতলী-পুলিশ লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে শ্রমজীবী মানুষের জীবন দিশেহারা। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার। এমনিতেই শ্রমিকের মজুরি কম। তাই শ্রমিকরা ঈদের আগে অতিরিক্ত কাজ করে তাদের আয় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি করে।
অধিকাংশ মালিকরা বোনাস না দিয়ে ৫০০/১০০০ টাকা বকশিশ দেয়। অনেক গার্মেন্টসে তাও দেয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না। শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে হবে। ঈদের আগে শ্রমিকের চলতি বেতন পাওয়া ন্যায্য।
শ্রমিকদের বেতন বোনাস ঈদের শেষ মুহুর্তে দিলে শ্রমিক বাড়ি যাওয়ার তাড়ায় ভালো করে কেনাকাটা করতে পারে না। শ্রমিকদের ঈদের কমপক্ষে ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৭ জুনের মধ্যে শ্রমিকের পূর্ণ বোনাস ও চলতি বেতনসহ সমস্ত বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করতে হবে। বেতন বোনাস নিয়ে মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তার জন্য মালিক ও প্রশাসন দায়ী থাকবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে উন্নয়ন বাজেটের সর্বোচ্চ অংশ বরাদ্দ করা হয়েছে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। আর বাজেটের প্রধান অংশ যথারীতি বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হবে।
বছর বছর বাজেটের অবয়ব বাড়ছে, বাড়তি বাজেটের অর্থের যোগান দিতে বাড়ছে কর, বাড়ছে ব্যাংক ঋণ, ঘটছে মুদ্রাস্ফীতি, বাড়ছে আয় বৈষম্য। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে পিষ্ঠ হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ কিন্তু রাষ্ট্রের এই উন্নয়ন তার আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেনা, দিচ্ছে না কাজের নিশ্চয়তা।
ফলে মুখে দারিদ্র দূরীকরণ, মুক্তিযুদ্ধের সাম্যের চেতনার যত কথায় বলা হোক, বাজেটের অগ্রাধিকার তালিকা প্রমাণ করছে যে শ্রমজীবীদের যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ বাজেট প্রণয়নকারীদের কানে প্রবেশ করছে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ উৎপাদনের জোয়াল যারা বহন করছেন সেই শ্রমজীবী মানুষের পুষ্টির নিশ্চয়তা, সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা, মাথার উপর ছাদ থাকার নিশ্চয়তা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করলে তা প্রকারান্তে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে।
যা কর ফাঁকি দেওয়া, ব্যাংক ঋণ আত্মসাৎকারী কালো টাকার মালিকদের পিছনে বিনিয়োগ করে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া, জাতীয় আয়ে দেশের শ্রমজীবী এবং প্রবাসীদের অবদান বাজেটে তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়ার দাবি রাখে। নেতৃবৃন্দ শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।