পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের বিপণিবিতানগুলো।
সকাল থেকে শুরু হয়ে অনেক রাত পর্যন্ত চলছে এ কেনাবেচা। ঈদ বাজারে বড়ে বড় মার্কেট ও বিপণী বিতানের পাশাপাশি কাপড় কিনতে গলির দোকানেও ভিড় করছেন ক্রেতারা।
এদিকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে শহরের বিপণী বিতান মার্কেটগুলিকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। বিপণী বিতান গুলোতে রাতে শোভা পাচ্ছে আলোক সজ্জা
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শহরের সমবায় মার্কেট, প্যানোরমা প্লাজা, মার্ক টাওয়ার, টপটেন মার্ট, হক প্লাজা, আলমাছ পয়েন্ট, বেইলি টাওয়ার, সান্তনা মার্কেট, আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার, জিরো বাজার, লুৎফা টাওয়ার, ইজি ফ্যাশন, সায়াম প্লাজা, হাসনাত স্কয়ার, লুৎফা টাওয়ার, সায়াম প্লাজা, বর্ষণ সুপার মাকেট, এফ রহমান সুপার মার্কেট, ফ্রেন্ডস মার্কেটে, সোলস্তা, আড়ৎসহ ছোট- বড় এসব মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকাতে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে এসেছেন। তবে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পোশাক, জুতা ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানগুলোতে। মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, প্রতিবারের মতো এবারো ঈদ বাজারে এসেছে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় সব পোশাক। তবে এবারে বাহারি ব্রান্ডের পাঞ্জাবির কালেকশন রয়েছে। তাছাড়া বাজারে দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আধুনিক ডিজাইনের সব ধরনের পোশাক রয়েছে।
বিভিন্ন ব্রান্ডের পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি, ফতোয়া, শার্ট-প্যান্ট, মেয়েদের জন্য থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট ও শিশুদের শার্ট-প্যান্ট, থ্রি—পিস, ট্রপিস ছাড়াও ওয়ান ম্যান, কালার কিউ, ডিটেক্স, ওয়েলি, ব্লুডিম, ব্লাক বার্ডের পাঞ্জাবি ও শিশুদের জন্য সব ধরনের নজরকাড়া পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
তবে পুরুষ ক্রেতাদের তুলনায় নারী ক্রেতাই বেশি। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এবার সব পোশাকের দাম একটু বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের।
কামরুন নাহার নামে এক ক্রেতা বলেন, শেষ মুহূর্তে ভিড়ের কারণে এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা একটু আগেই সেরে ফেলার ইচ্ছা থাকলেও এর পরেও এসে দেখি বাজারে উপচেপড়া ভিড়। কাপড়ের দাম চাইছে বেশি। দামাদামির সময় নেই। এর মধ্যেই মেয়ের জন্য থ্রি-পিস কিনলাম। আমার আরো অনেক কেনাকাটা বাকি আছে।
সায়মা ফ্যাশনের মালিক আবদুস ছাত্তার বলেন, শুরুতে ক্রেতা কিছুটা কম হলেও ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। আমাদের দোকানে পোশাকের পাশাপাশি জুতা ও প্রসাধনী বিক্রি হলেও এখন পর্যন্ত পোশাকের বিক্রিই বেশি। এ বছর দাম বেশি হলেও পোশাকের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট।
আব্দুল মালিক নামের সমবায় মার্কেটের একজন বিক্রেতা জানান, গরম বাড়ছে, তাই গরমে পরার উপযোগী পোশাকগুলোই তারা তাদের দোকানে সাজিয়েছেন। ক্রেতারাও গরমে আরামদায়ক হবে এমন পোশাক কিনছেন। ঈদ সামনে তাই তাদের বিক্রিও বেড়েছে।
বাচ্চাদের ঈদ কেনাকাটা আগেভাগে সেরে রাখতে বন্দর থেকে শহরের মার্কেটে এসেছেন শারমীন আক্তার। তিনি বলেন, বাচ্চাদের তো ঈদের খুশিটা অনেক বেশি। তাই তাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে চলে এসেছি।
এখন ওদের পছন্দ অনুযায়ী, ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার চেষ্টা করছি। তবে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। আমাদের জন্য হয়তো তেমন কিছু না কিনলেও চলে। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য তো না কিনলে হয় না।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে মধ্যবিত্তের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে শহরের চাষাড়া ফুটপাতের হলিডে মার্কেট গুলো। শখ ও সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব মিল ঘটাতেই নিম্ম আয়ের ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ ফুটপাতের দোকানগুলো। বিক্রেতাদের দাবি ফুটপাতের দোকানে দাম তেমন বাড়েনি।
সামির আহমেদ নামের এক ফুটপাতের দোকানের বিক্রেতা জানান, যাদের আয়-রোজগার কম তারাই মূলত ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে আসেন।
আমরাও তাদের কাছে সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকি। কারণ আমরা চাই সবাই আনন্দের সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করুক। ঈদে বিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।