নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, প্রশাসনকে প্রশাসনের মতো করেই চলতে হবে। হকারদের উঠিয়ে দিলে এরা কোথায় যাবে, কোথায় ঘুমাবে এই চিন্তা প্রশাসনের করলে হবে না। কোনো না কোনোভাবে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
আমাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতিটা বেশি আছে। চোখের পর্দা উল্টানো না গেলে আলোচনা করে লাভ হবে না। আমাদের কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে। গত ১০ বছরের চেষ্টার পরে আমরা একত্রিত হতে পেরেছি। আজকে এখান থেকে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব কী কী করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমস্যা ও যানজট নিরসনে গোলটেবিল বৈঠক বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা গুলো বলেন। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সেলিম ওসমান বলেন, প্রশাসনকে বলতে চাই, স্ট্যান্ডগুলোকে সড়ান, খালি করেন। এরপর নোটিশ দেন যে ফুটপাতে কোনো দোকান থাকবে না। শহরে কয়টি বাস আছে, টেম্পুগুলো কার, স্ট্যান্ড কে চালায়, সেই হিসেব আমাকে দিন।
মেয়র চাচ্ছেন রাস্তাগুলো আগে খালি করা হোক। আপনারা তা না পারলে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ থাকার লাগবে না। আপানারা ঘুমান, আমরা বের হবো। আমরা যদি বাইরে যাই অমুকের লোক, তমুকের লোক আসছে এমনটা হবে।
একসময় আমাদের নারায়ণগঞ্জ পাটে ভরপুর ছিল। পাট ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না এটার বাইরে কেউ কখনও চিন্তাও করতে পারে নি। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ছিল, পাট বন্ধ হওয়ায় কি তারা না খেয়ে মারা গেছে। শেখ হাসিনার সরকারে কেউ না খেয়ে মরবে না।
তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে থাকবে, কথা দিচ্ছি রোজার আগেই রাস্তাঘাট খালি হয়ে যাবে। এখানে শামীম ওসমান সাহেব আছেন। উনার শক্তি আছে, কর্মী বাহিনী আছে, উনি চাইলেই সম্ভব। আমরাও তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করব।
তিনি বলেন, আমার ছোট বোন (সেলিনা হায়াৎ আইভী) একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার দায়িত্ব যেটা নয়, সেটার জন্য কেন আমাকে দোষারোপ করা হবে, আমি সেটা জানতে চাই।
সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যা ময়লা। এই ময়লা কোথায় যাবে। বাধ্য হয়ে লিংক রোডে গিয়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার কোণায়, বন্দরে যায়। যতক্ষণ রাস্তা পরিষ্কার না হবে, ততক্ষণ এসকল সমস্যার সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, রাস্তার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের হাতে। ফুটপাত কার হাতে? এটা কি মাসলম্যানদের হাতে? এই দখলকারীরা কারা? এরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না। সারা দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, মানুষ ভালো থাকুক। আমাদের একত্রি হতে হবে। একটা ফুটপাতও দখলে থাকবে না। এটা না থাকলে মাদক, ইভটিজিংও থাকবে না।
হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের জান বের হয়ে যায় পরীক্ষা থাকলে। আমরা বাস কিনে দিয়েছি। কিন্তু কলেজ গেটে বাস কোথা দিয়ে যাবে? কেন এই রাস্তা বারবার উচ্ছেদ করার পরেও কাঁচাবাজার বসে সেখানে? এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করতে পারলে বসব, নয়ত আমরা বসব না, যোগ করেন সেলিম ওসমান।
সেলিম ওসমান আরও বলেন, এখানে কোন রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি একটাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে চলাচল করতে দিতে হবে। আমরা মেয়রকে অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা করোনার সময়ও করেছি। আমরা স্কুল করেছি, কিন্তু বাচ্চারা স্কুলে যায কিনা খবর রাখতে পারি না।
আমরা একসাথে বসব স্বেচ্ছাসেবী নেব। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো সমস্যা রাখব না। আমার মেয়র আইভীকে নিয়ে আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে নিয়ে আমরা এটা করব। শামীম ওসমানকে আমরা শক্তি হিসেবে কাজে লাগাব, যোগ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপু'র সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু, নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ( ইঞ্জিঃ ) মো. শামসুল কবীর, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ- সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সালাম, আবু সাউদ মাসুদ, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক, সদস্য আফজাল হোসেন পন্টিসহ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দ, বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।