নারায়ণগঞ্জ জেলার জালকুড়ির আদর্শ নগর এলাকার বাসিন্দা নাছরিন আক্তার। বাবার খুদে ব্যবসা করেন, অভাব অনটনের মধ্যেই দিয়ে দিন চলতো তাদের। পিতা যে সামান্য আয় করতেন তা দিয়ে লেখা পড়া তো দূরের কথা খাবার জুটতেও কষ্ট হতো তাদের। এরপরও জীবন যুদ্ধে হার না মানা নাছরিন আক্তার টিউশনি করে পড়া লেখা চালিয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে প্রাইভেট কোম্পানিসহ সরকারি দপ্তরগুলোতে চাকুরির আবেদন দিয়েছেন। কোথায় কোন চাকুরি না পেয়ে দিশেহারা নাছরিন। এরই মধ্যে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেয়া হবে। নারসিন আক্তার বুক ভরা আশা নিয়ে ওই নিয়োগের বিপরীতে সার্টিফিকেট পেশকার পদে মাত্র একশত টাকা খরচ করে আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্টিফিকেট পেশকার পদে সকল ধাপ পেরিয়ে চাকুরি পান নাছরিন আক্তার। নাছরিন বলেন গরীবের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে জীবনে খুব কষ্ট করে লেখা পড়া করেছি। কোনো ধরনের ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকুরি পাব জীবনে ও ভাবতে পারি নাই। তবে বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন চাকুরি পাব। আর সেই ইচ্ছা শক্তি থেকেই এই চাকুরির সুযোগ করে দিয়েছে। আমি চাকুরি পেয়ে খুব আনন্দিত।
শুধু একশ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে চাকুরি পাব এটা কল্পনাতীথ ছিলো । শুধু নাছরিন আক্তার নয় নাছরিন আক্তারের মতো ৩০ জনের একশ টাকার বিনিময়ে চাকুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিয়োগ প্রাপ্তরা সকলেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, রাজস্ব শাখার ৭ ক্যাটাগরিতে ৩২টি শুন্য পদের জন্য ৩০জন নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন।২জন যোগ্য জনবল না পাওয়া পরবর্তীতে পূর্ব নিয়োগের প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।
অপরদিকে ড্রাইভার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত তানজিল হোসেন বলেন, আগে জানতাম ডিসি অফিসে চাকুরির নাম নিলেই দশ থেকে পনের লাখ টাকা গুনতে হতো। সেই টাকার ভয়ে প্রথমে আবেদন করতে চাইনি। পরে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে চাকুরির আবেদন করি। চাকরি পেতে মাত্র একশ টাকার ব্যাংক ড্রাফট লেগেছে। এখন আমি ও আমার পরিবারের সবাই খুশি।
নিয়োগ পাওয়া সাজ্জাদ বলেন, এতো দিন জানতাম ঘুষ না দিলে চাকুরি হয় না। এখন বুঝলাম ঘুষ ছাড়াও নিজের মেধা ও যোগ্যতায় চাকুরি পাওয়া সম্ভব। তাই বিনা পয়সায় চাকুরি পেয়ে জেলা প্রশাসক দপ্তরের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উক্তি অনুযায়ী প্রতিটি শুন্য কোঠায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। তাই স্ব স্ব দপ্তরের শুন্য কোঠা গুলো চিহ্নিত করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। জেলা প্রশাসক বলেন সরকারি বিধি অনুযায়ী একশত ভাগ স্বচ্ছতার মধ্যে রাজস্ব শাখায় নিয়োগ দিতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছি।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, রাজস্ব শাখার ৭টি শুন্য পদে ৩২ জন নিয়োগের নিমিত্তে ৩০ জন কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন বিহীন নিজেদের যোগ্যতা সাপেক্ষে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন।কাউকে ব্যাংক ড্রাফট বিহীন একটি টাকাও বেশি গুনতে হয়নি।সম্পুর্ন নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অধীনে।
এখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক অফিসের কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগই নাই বলে জানিয়েছেন তিনি। এরপরও যদি কোনো ধরনের ঘুষ আদায়কারী অথবা লেনদেনের তথ্য সুনির্দিষ্ট প্রমানের ভিত্তিতে পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে স্পষ্ট হুশিয়ারি জানান।