নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমার ভাইকে কোন ব্যক্তিগত কারণে হত্যা করা হয়নি। শুধু মাত্র সমাজসেবায় মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
আমার ভাই আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজীদের নাম উল্লেখ্য করে এবং তারা কে কত টাকা পায় এসব বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজও আমার ভাইয়ের হত্যা বিচার পাইনি।
শুধুমাত্র টাকার কাছে হেরে গেছি। হত্যাকারীরা টাকা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট করিয়েছে। তাই আজও বিচার পাইনি। খুনিরা আবারো আমাদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহীদ সাব্বির আলম খন্দকারের ২০ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী স্বরণে ও শহীদ সাব্বিরের খুনিদের সর্ব্বোচ শাস্তি এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করা এবং ১৮ ফ্রেব্রুয়ারিকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষনার দাবীতে শোক র্যালী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার আরও বলেন, অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু হলে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের একটি মিটিং হয়। সেখানে ৩২টি ব্যবসায়ী সংগঠনসহ প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সেই মিটিংয়ে সাব্বির আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জের কোথায় কার নেতৃত্বে সন্ত্রাস হয়, জাকির খান ও তার সহযোগীরা কীভাবে সন্ত্রাস করে তা সে তথ্য তুলে ধরে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টানানো জাকিরের ব্যানার, ছবি অপসারণের দাবি জানান সাব্বির।
প্রশাসন এসব সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিতে থাকে। চাঁদাবাজিই ছিল জাকির খানের পেশা। জাকিরের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ শহরে ঝুট ও মাদক সন্ত্রাস চলতো। সাব্বির ঝুট সমিতির চেয়ারম্যান ছিল। যখনই তার কাছে খবর আসতো সন্ত্রাসীরা ঝুট নিতে এসেছে তখনই সে এটার মোকাবিলা করতো। এসব কারণে সাব্বিরকে খুন করা হয়।
জেল থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জাকির এখন তার অনুগামীদের দিয়ে এ চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছেন বলে দাবি করেন অ্যাড. তৈমূর।
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাকে (জাকির খান) জনপ্রিয় বলে। কিন্তু কোন ভালো কর্ম আছে তার কিংবা তার পরিবারের? পতিতালয় পরিচালনা ছাড়া তাদের কোনো ভালো কাজ নেই।
টানবাজারের পতিতালয়ের মালিক দৌলত খানের ছেলে জাকির। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ৩১টি মামলা আছে। একটি সন্ত্রাস দমন আইনে তার সাজা হয়েছিল। সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশে তার সাজা মওকুফ হয়। আরেকটি মামলায় তার সাজা এখনও বহাল রয়েছে।
সবশেষে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সাব্বির ফিরে আসবে না, কিন্তু সন্ত্রাস এখনও আছে। আমি সবাই অনুরোধ করব সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি মোকাবিলা করতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
উল্লেখ্য, সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাপরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার ২০তম বার্ষিকী। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন সাব্বির।
হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।
নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেছিলেন, গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।
এর পর থেকে ৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।
এরপর থেকে জাকির খান দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। পরিচয় গোপন করে গত এক বছর সপরিবারে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।