নারায়ণগঞ্জে দু’দিনব্যাপী জেলা সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ব্যাপক আয়োজনে ও বাংলা একাডেমীর সহযোগিতায় গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর শহরের জিয়া হল প্রাঙ্গণে এ সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুদিন ব্যাপী এই সাহিত্য মেলায় জেলার ১২০ জন কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, প্রবন্ধক অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজনের প্রথমদিন শনিবার সকাল ১০টায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দুদিনব্যাপী এ সাহিত্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমত আরা’র সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক আনোয়ার হোসেন, কবি, প্রাবন্ধিক ও বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা আসাদ আহম্মেদ প্রমুখ।
ওই দিন সাহিত্যমেলার দ্বিতীয় সেশনে কবি ও গবেষক শাহেদ কায়েসের লেখা ‘নারায়ণগঞ্জ জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক নাফিজ আশরাফ, কবি রহমান মুজিব, কবি কাজল কানন, কথাসাহিত্যিক শরীফ উদ্দিন সবুজ প্রমুখ।
প্রবন্ধে লেখক নারায়ণগঞ্জ জেলার সাহিত্য ইতিহাস আলোচনায় বলেন, বিশ শতকের গোড়ার দিক থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জ ছিল প্রাগ্রসর। সেই সময়ে স্থানীয় বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্প-সাহিত্যের আড্ডা, নাটকের চর্চা ছিল।
ত্রিশের দশক, চল্লিশের দশক এবং পঞ্চাশের দশকে কিছু কিছু সংগঠন গড়ে ওঠে। ১৯১১ সালে নারায়ণগঞ্জে শাহজাহান নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাট্টাচার্য শিশির ভাদুড়ী তাঁর দল নিয়ে কলকাতা থেকে এসে নাটকটিতে অংশ নিয়েছিলেন, এবং সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের শীতলাকান্ত মুখার্জি।
প্রবন্ধে তিনি লিখেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসংখ্যবার পূর্ববঙ্গে এসেছিলেন, এরমধ্যে একবার ছাড়া প্রতিবারই তিনি নারায়ণগঞ্জ হয়ে গিয়েছেন, একবার শুধু চাঁদপুর দিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯২৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নারায়ণগঞ্জ স্কুলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল।“
রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জীতে উল্লেখ করেছেন, ‘১৯২৬ সালে ৬৫ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ নারায়ণগঞ্জে এক ভাষণ দিয়েছিলেন।'
কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। ১৯১৪ সালে নজরুল প্রথম নারায়ণগঞ্জ আসেন। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশ) আসা। নারায়ণগঞ্জের গলাচিপা আখড়ায় নজরুল গান করেছেন সারারাত। এছাড়াও নজরুল, আব্বাসউদ্দিন দুই দিনব্যাপী গান করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ এসে।
তাঁর একটি গান নারায়ণগঞ্জে এসে শীতলক্ষ্যা ঘাটে বসে লেখা, নারায়ণগঞ্জ স্টিমার টার্মিনালে একটি দৃশ্য তাঁর এই গানের প্রেক্ষাপট। গানটি হলো- আমি পূরব দেশের পুরনারী (গো)। এছাড়া তার আরেকটি গান নারায়ণগঞ্জে এসে লেখা। নজরুল তার পান্ডুলিপিতে অভিযান কবিতায় স্বাক্ষর করে লিখেছিলেন ‘নারায়ণগঞ্জ, ২-৭-২৬’।
প্রবন্ধে লেখক জেলার শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে আলোচনা করেন। যেখানে জেলার উল্লেখযোগ্য সংগঠনের নাম উঠে আসে। একই সাথে তিনি জেলার সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী, ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক-সাহিত্যিকদের নিয়েও তার প্রবন্ধে আলোচনা করেন। শাহেদ কায়েস তার প্রবন্ধে জেলার লোকসাহিত্য নিয়েও আলোচনা করেন।
সাহিত্যমেলার দ্বিতীয় দিন রোববার সকালে ১২০জন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ/নিবন্ধ, ভ্রমণ সাহিত্য বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি করিম রেজা, কর্মশালা পরিচালানা বিষয়ে দিক নির্দেশনা ও আলোকপাত করেন কবি শাহেদ কায়েস।
কর্মশালায় ৮ দলে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণকারীরা সাহিত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন এবং শেষে দলগুলোর দলনেতা এসব বিষয়ে বক্তব্য দেন।
আয়োজনের শেষ পর্বে কবি করিম রেজা ও প্রবন্ধক আসাদ আহম্মেদ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কাজ মূল্যায়ণ ও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। এ সময় তারা লেখকদের প্রস্তুতি ও বই প্রকাশনা প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করেন।
শেষে সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাহিত্যমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।