নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২২ নভেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজার বন্ধ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৪:৩২, ২৬ নভেম্বর ২০২২

নারায়ণগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজার বন্ধ

নারয়ণগঞ্জের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সাত মাস ধরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব বন্ধ রয়েছে। সরকারি সেবা না পেয়ে অধিক অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি সেবা গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। 


অপারেশন ও পরবর্তী চিকিৎসা সেবা নিতে আর্থিকভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের। এদিকে সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান বন্ধ হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শে তার পছন্দমতো শহরের বেসরকারি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।


মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানে ইতিপূর্বে প্রতি মাসে ২০-৩০ টি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতো। বর্তমানে চিকিৎসা সামগ্রী থাকলেও সাত মাসের অধিক সময় যাবৎ অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা হয়না। 


তবে ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি মায়েরা। চিকিৎসা নিতে আসা গর্ববতী মা ও তার স্বজনদের দাবি, দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে পুনরায় সিজারিয়ান কার্যক্রম চালু করা হোক।


জানা যায়, হাসপাতালের অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক ডা. সেলিমা বেগম অবসর গ্রহণ পরবর্তী চলতি বছরের এপ্রিল থেকে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু রোগীর কমতি নেই। দৈনিক বহি.বিভাগে গড়ে ২৫ জন গর্ববতী নারীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, যারা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ফাতেমা শিরিনের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। 


এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করার কারণে প্রসবের সময় রোগী ও তাদের স্বজনেরা সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজনে বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটেন। ডাক্তার যেখানে অপারেশন করবেন সেখানেই চলে চিকিৎসা।


সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ওয়ার্ড ও অপারেশন কক্ষ তালাবদ্ধ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখা হলেও দুপুরের পর জনশূণ্য হয়ে পড়ে হাসপাতালটি। দুই-একজন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী ছাড়া আর কারো দেখাই মিলে না। 


হাসপাতালে প্রসূতি মায়েদের অন্যান্য চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা চালু থাকলেও দুটি ওয়ার্ডের একটিতেও রোগী নেই। এদিকে জরুরি মুহূর্তে সিজার করতে আসা রোগীরা চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে তাদের গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।


হাসপাতালে আগত গর্ভবতী নারী আয়েশা বলেন, আমি এখানে নিয়মিত এখানে চেকআপ করাই। এখানের ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েই চলছি। কিন্তু শুনেছি এখানে সিজার হয়না। সিজারের প্রয়োজন হলে ডাক্তার অন্য কোথাও সিজার করাবে বলছে। কিন্তু এখানে আমার আত্মীয়রা সিজার করাইছে। কম খরচে চিকিৎসা হয় শুনেই আসছিলাম। 


আয়েশার স্বামীকে অন্য সরকারি হাসপাতালে যোগাযাগ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যে ডাক্তার রোগীর শুরু থেকে চিকিৎসা করে, সে রোগীর অবস্থা ভালো জানে। আমার স্ত্রীর সিজার করার সম্ভাবনা বেশি। এখানে এই আপার (ডাক্তার) কাছে করাতে পারলে ভালো হইতো। খরচ বাঁচতো।


হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ফাতেমা শিরিন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধের প্রসঙ্গে বলেন, হাসপাতালে আগে সিজারিয়ান অপারেশনের পর ওয়ার্ড ভর্তি রোগী  চিকিৎসাধীন থাকতো। আমাদের এখানে একজন অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসকের প্রয়োজন। 


অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক অবসর গ্রহণের পর থেকে অস্ত্রোপচার করে প্রসব বন্ধ আছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি নিয়মিত হচ্ছে। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হওয়ার পর প্রসব অর্ধেক কমেছে। তবে এখানে রোগী দেখা নিয়মিত হচ্ছে ও রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দেন বলে জানান তিনি।


নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মশিউর রহমান এই প্রসঙ্গে বলেন, অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক না থাকায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এখন সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না। চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া  হলেই অপরারেশন চালু হবে।
 

সম্পর্কিত বিষয়: