নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চাষাড়ায় তাঁতবস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের নামে বিদেশী পণ্যের সমাহার

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০২:২৩, ১৭ এপ্রিল ২০২২

চাষাড়ায় তাঁতবস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের নামে বিদেশী পণ্যের সমাহার

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় শহীদ জিয়া হল প্রাঙ্গনে তাঁতবস্ত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার অনুমোদন নিয়ে স্টলে স্টলে বিদেশী পণ্যের সমারোহ গড়ে তোলা হয়েছে।

 

যেসব পণ্য বিক্রির কথা বলে মেলার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে মেলায় ওইসব পণ্যের দেখা নেই বললেই চলে। বেসরকারি সংস্থা উইভার্স নামের একটি সংগঠন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে এই মেলার আয়োজন করে। 


সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় তাঁতবস্ত্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের স্থলে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। হস্ত শিল্পের কয়েকটি স্টল থাকলেও সেখানেই স্থান পায়নি কুটির শিল্প।

 

মেলায় ২০টি স্টলের মধ্যে মিয়াকো ইলেক্ট্রনিক, আলিফ সুজ, ডিজাইন ইলেক্ট্রনিক্স, ঢাকা ফ্যাশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে মেলার প্রবেশ পথে নামে মাত্র একটি জামদানী শাড়ির দোকান রয়েছে। মূলতঃ ঈদকে সামনে রেখে একটি চক্র এই মেলার আয়োজন করেছে। যা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।


মেলায় স্থান পাওয়া স্টল মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মেলায় প্রতিদিন একটি ছোট স্টলের নূন্যতম ভাড়া ৩ হাজার টাকা। একটি বড় স্টলের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। এভাবে মেলার আয়োজকরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া আলাদা ভাবে বিদ্যুতের জন্য প্রতি স্টল থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩শ’ করে টাকা।   


অস্বচ্ছল তাঁতীদের সাহায্যার্থে গড়ে তোলা বাংলাদেশ উইভার্স প্রোডাক্ট এন্ড ম্যানুফেকচার্স বিজনেস এসোসিয়েশন নামে সংগঠনটি গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণার্থে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক যুগ ধরে মেলা করে আসছে। 


এসব মেলায় বিদেশী পণ্য ছাড়া কোন গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের জামদানী শাড়ির দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয় না। শুধু তাই নয় আর্থিক ভাবেও কোন সহযোগীতা করা হয়না তাঁতীদের। এছাড়া সংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দদের দাবী আয় ব্যয়ের হিসেবতো দূরের কথা মেলার কোন লভ্যাংশ কোন সময় সংগঠনের ফান্ডে রাখা হয়নি।


তাঁতীদের অভিযোগ, গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের নাম ব্যবহার করে চক্রটি র্দীঘদিন ধরে এ ধরণের মেলার আয়োজন করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। 


তাঁতীরা জানান, উইভার্স সংগঠনের কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে সংগঠনের সভাপতি সালাউদ্দিন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চাষাঢ়া জিয়া হল প্রাঙ্গনে রোজার এক মাসের জন্য গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণার্থে তাঁতবস্ত্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার অনুমোদন নিয়েছেন।


অভিযোগের বিষয়ে উইভার্সের সভাপতি সালাউদ্দিন জানান, বাংলাদেশ উইভার্স প্রডাক্ট এন্ড ম্যানুঃ বিজনেস এসোসিয়েশন সংগঠনের কার্যকরী কমিটি ২১ সদস্যের। বিভিন্ন স্থানে গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যানে সংগঠনের ব্যানারে মেলার আয়োজন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সংগঠনের কেউ মেলার আয়োজন করতে কোন রকম সহযোগিতা করেন না। 


মেলা শুরু করলে উড়ে এসে জুড়ে বসে। আর শুধু জামদানী শাড়ির দোকান দিলে মেলায় লাভ বলতে কিছুই থাকেনা। এখন শাড়ি কেউ কিনে না। তাই নানা ধরনের আইটেমের দোকান রাখতে হয়। 


তিনি জানান, করোনার আগে এখানেই মেলা করে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ওইসময় জেলা প্রশাসক নানা জনের অভিযোগে মেলা উচ্ছেদ করে দিয়েছে। এবছর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।


তিনি আরো বলেন, ১৯৯৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উইভার্স সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই সময় থেকে এ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। বর্তমানে আমাদের সংগঠনে প্রায় ২৫০জন সদস্য রয়েছে। সদস্যদের তেমন কোন সহযোগীতা না পাওয়ায় সংগঠনের ফান্ডে ১০টাকাও জমা রাখতে পারিনি।


উইভার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, এক সময় সালাউদ্দিন রাস্তায় হেঁটে কাপড় বিক্রি করতেন। বর্তমানে সে কোটিপতি। ৪/৫টা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে জমি আছে। এছাড়াও একটি টেক্সটাইল মিলও ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন। এসবই গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যানের নামে হাতিয়ে নেয়া টাকায় গড়েছেন।


জামদানী তাঁতী আউয়ুবুর রহমান বলেন, গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণে নামে সালাউদ্দিন নিজের পকেট ভারী করছেন। তিনি শুধু তাঁতীদের ক্ষতি করছেন না তিনি জামদানীরও ক্ষতি করছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। 


নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখার নাজির কামরুল ইসলাম জানান, গরীব অসহায় ও দুঃস্থ তাঁতীদের কল্যাণে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোন টাকার বিনিময়ে নয়।

 

এ মেলায় কোন বিদেশী পণ্য বিক্রি করতে পারবেনা। এখানে শুধু তাঁতীরাই তাদের তাঁতবস্ত্র প্রদর্শন করে বিক্রি করবে। আয়োজক যদি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারনা করে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ মেলা সম্পর্কে সবকিছু শুনে বলেন, এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  
 

সম্পর্কিত বিষয়: