সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনাদী রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাণ্টিন ভাড়ার টাকা আত্মসাত করেছেন সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতারা। শ্রেণিকক্ষ ভাড়া নিয়ে পোশাক কারখানা গড়ে তুলেছেন যুবদল নেতা কামাল। ভাড়া দেন মাসে ১০ হাজার টাকা। তবে স্কুল তহবিলে জমা হয়নি ১ টাকাও। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপূরে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের আলোচনা বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে।
বৈঠকের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মতে ভাড়ার বকেয়া ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে পোশাক কারখানা সরিয়ে নিতে সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরুণের ফি বাবদ নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে দিয়েছেন।
জানা গেছে, স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার প্রধানশিক্ষক মোহাম্মদ আলীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। পরে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। পাশাপাশি শনিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক বসার তারিখ ঠিক করা হয়।
আলোচনা বৈঠকে উঠে আসে, অনিয়মের মাধ্যমেই ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মরহুম রেকমত আলীর ৪৪ ও ইদ্রিছ আলীর ১৭ সহ মোট ৬১ শতাংশ জমির উপর স্কুলটি গড়ে উঠে। তবে এখন একাধিক ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করছেন। জমি দাতা হিসেবে স্কুলটির নামকরণ করা হয় মিজমিজি পাইনাদী রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। রেকমত আলীর নাতি আব্দুর রহিম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
পরে ২০১৭ সালে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক দফা পরিবর্তনের পর সভাপতি হোন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত তিনি সভাপতি ছিলেন। মজিবুর রহমান সভাপতি হওয়ার পর থেকেই মূলত অনিয়মের মাত্রা বেড়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের করা স্কুল তহবিলে ১০ জন দাতা সদস্যের অনুদানের ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বৈঠকে জানান, সরকারি নির্দেষে স্কুলের নামে জমির নামজারি করতে গেলে বিপত্তি দেখা দেয়। মরহুম রেকমত আলীর অন্য এক নাতি সালাউদ্দিন ২১ শতাংশ জমির মালিক দাবি করেন। তখন বহু দেন দরবার করে ২০ লাখ টাকা রফাদফা করি। তাকে নগদ ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ৬ শতাংশ জমি কিনে নিতে হয়েছে।
৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে দলিল করতে, আর ২ লাখ টাকা তহবিলে জমা রয়েছে। সরকারি ২০ লাখ টাকা অনুদানের সব টাকা ছাড় হয়নি। যা হয়েছে তা দিয়ে একটি ভবনের ৬ তলার নির্মাণ কাজ চলছে। স্কুল ক্যাণ্টিনের ভাড়া তিনি ৪ বছর ধরে পান না। ক্যাণ্টিনটি ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম ও মাসিক ২ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। ৪ বছর ধরে ক্যাণ্টিনের ভাড়া না পেলেও তিনি কেন নিরব ছিলেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা এমএ হালিম জুয়েল বলেন, স্কুলের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসি। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। ১৫ দিনের মধ্যে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে পোশাক কারখানাটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২ লাখ করে টাকা নিয়ে দাতা সদস্য করা যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। তবে তাদের দেওয়া ২০ লাখ টাকা খরচের হিসেব দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। অন্য অনিয়মের বিষয়টি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করে খতিয়ে দেখে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।