সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকায় এক মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসা থেকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে বহিস্কার হওয়া সেই বলাৎকার হুজুর আবারও ফিরে এসেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকাস্থ বায়তুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তাওসিফুল হক জসিম (৩০) ঘৃণ্য এ কাজটি করে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কিন্তু ২০ দিনের মাথায় তাকে আবারও অজ্ঞাত কারণে মাদ্রাসার ভবনের মালিক সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ দেলোয়ার ওরফে পল্টি দেলোয়ার মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনে। এ ঘটনায় ঐ মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্র ও অভিভাবকরা রয়েছেন আতঙ্কে।
তবে দেলোয়ার বিএনপির এক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকাবাসীকে বলাৎকার হুজুরকে পুনর্বাসন প্রতিবাদকারীদের রাজনৈতিক মামলায় আসামী করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
ফলে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। বায়তুল কোরআন মাদরাসার প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত তাওসিফুল হক জসিম নেত্রকোনার দূর্গাপুরের আটরশিয়া গ্রামের মো. আবুছানের ছেলে।
সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকাবাসী জানায়, পর্যায়ক্রমিকভাবে অসংখ্যবার এক নাবালক ছাত্রকে বলৎকার করার ঘটনাটি গত ২৯ আগষ্ট জানতে পারে এলাকাবাসী। এতে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তাকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অকপটে বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন উপস্থিত ছাত্র-জনতার কাছে।
একই সময় অভিযুক্ত শিক্ষক জসিম অপরাধের কথা লিখিতভাবে স্বীকার করে। যার মধ্যে স্বাক্ষী হিসাবে ভবনের মালিক চাঁদাবাজ দেলোয়ার ওরফে পল্টি দেলোয়ারসহ ১৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষরও রয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জসিম মাদারাসায় আর কোন দায়িত্বে না থাকার শর্তে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এতে স্বস্তি ফিরে আসে মাদ্রাসাপ্রঙ্গনে। কিন্তু শিক্ষক জসিম মাদ্রাসা ছাড়ার মাত্র ২০ দিন পর থেকে মাদ্রাসায় যাতায়াত করা এবং সকল কার্যক্রম করা শুরু করে।
মাদ্রাসাটি অভিযুক্ত জসিমের শ^শুর হাউজিং এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে পল্টি দেলোয়ারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়। এরপর শিক্ষক জসিমের শ^শুর মাজহারুল ইসলাম সুনামের সাথে মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসার এক পর্যায়ে তিনি প্যারালাইস্ড হয়ে পড়েন।
ফলে মাদ্রাসার হাল ধরেন তার জামাতা জসিম। জসিম মাদ্রাসার হাল ধরে কাজ করার এক পর্যায়ে ১১ বছরের এক শিশুর উপর তার লৌলুপ দৃষ্টি পড়ে।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার জানায়, নির্যাতনের শিকার ১১ বছর বয়সী শিশুটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাউজিং এলাকার বায়তুল কোরআন মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে আবাসিকে ভর্তি হয়।
মাদ্রাসায় আবাসিক থাকায় সেখানে শিশুটি এক একা বিছানায় থাকতে ভয় পেতো। সেজন্য প্রধান শিক্ষক শিশুটিকে তার সাথে নিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে। সেই থেকে গত ৩-৪ মাস ঐ শিশুকে নৃশংসভাবে বলাৎকার করতে থাকে।
এক পর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে ঐ শিশু বাসায় গেলে আর মাদাসায় ফিরে আসতে অস্বীকার করে। শিশুর কাছে মাদ্রাসায় যাওয়ার কারণ না জিজ্ঞেস করেই তার বাবা-মা তাকে কয়েকবার মাদরাসায় জোর করে দিয়ে আসে।
একপর্যায়ে ঐ শিশু মাদ্রাসায় গেলে আত্নহত্যার হুমকি দেয় তার বাবা-মার কাছে। ফলে তার বাবা-মায়ের টনক নড়ে। পরবর্তীতে তারা মাদ্রাসায় যেতে অস্বীকার করার কারণ জানতে চাইলে শিশুটি পুরো ঘটনা খুলে বলে।
এরপর শিশুর বাবা মাদ্রসায় গিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে শিক্ষক জসিম বিষয়টি অস্বীকার করে। এরপর তিনি ঐ মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে এলাকাবাসীর কাছে ব্যপারটি জানালে এলাকার ছাত্র-জনতা মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষক জসিমের কাছে ঘটনাটি জানতে চায়।
এসময় তিনি অকপটে বলাৎকারের ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেন, তার ভুল হয়ে গেছে। এসময় তিনি ছাত্র-জনতার সামনে লিখিতভাবে বলাৎকারের ব্যাপারটি স্বীকার করে মাদ্রাসা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক জসিম ইতিপূর্বেও মিরপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার মাদরাসায় এমন বলাৎকারের ঘটনা ঘটালে তাকে বহিস্কার করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। আমরা ভেবেছিলাম এরপর তিনি ভালো হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুনরায় তিনি আবার তার শ^শুরের মাদ্রাসার দায়িত্ব নিয়ে এই ছাত্রের সাথে এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটালো।
এদিকে ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর মাদ্রাসার ভবন মালিক দেলোয়ারের সাথে সমঝোতা করে আবারো মাদ্রসায় পুনর্বহাল হয়। এতে এলাকাবাসী বাঁধা দিলে ভবন মালিক দেলোয়ার হাউজিং এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ী ও ক্যাডার দিয়ে এলাকাবাসীকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলামান হত্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
এতে এলাকাবাসী আর কোন প্রতিবাদ না করায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবারো সেই মাদ্রাসায় নিয়মিতভাবে মাদ্রাসার কার্য্যক্রম চালিয়ে আসছে। মাদ্রাসায় যোগদান করেই দুইজন শিক্ষককে চাকুরীচ্যুত করে তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার কাছে তথ্য প্রেরণের অপবাদ দিয়ে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক তাওসিফুল হক জসিম জানায়, সে আমার রুমেই থাকতো। একরাতে আমার গরম লাগার কারণে হঠাৎকরে আমি তার সিটের উপর (বিছানায়) চলে গেছি। অর্ধেক শরীর ওর সিটের উপরে ছিলো। পরে সে বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে বাসায় গিয়ে বলে।
পরে অনেকগুলো পোলাপানা মাদ্রাসায় এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেছে। পরে বাড়িওয়ালা (দেলোয়ার) সমাধানে নিয়ে আসছে। এখন বাড়িওয়ালার অর্ডারেই আমি আবার মাদ্রাসার কার্যক্রম চালাচ্ছি।
কিন্তু বিষয়টি বাড়িওয়ালা দেলোয়ার অস্বীকার করে বলেন, আমি হুজুরকে মাদরাসায় আসতে কোন অর্ডার দেইনি। তবে সে একদিন এসে আমাকে ভাড়ার টাকা দিয়ে চলে গেছে।