কালেমা পড়, তোকে এখনই মেরে ফেলা হবে, মনে মনে কালেমা পড়তে ছিলাম, মনে হয়েছিল একটু পরেই আমার মৃত্যু হবে। তারা (অপহরণকারীরা) আমাকে মাদ্রাসার ৩ তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক আমাকে ৩ তলা নেয়া হয় নিচে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে হত্যা করার জন্য। সারারাত থেমে থেমে আমার টর্চার চালায়। তাদের নির্যাতনে আমি একধিকবার জ্ঞান হারিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ি। তারা হুংকার দেয় ’ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দে‘ না হলে ৩ তলা থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলবো। তোর লাশ ধলেশ্বরী নদীর ফেলো দিবো। শুক্রবার এভাবেই নিজের প্রতি নির্যাতনের বর্ণনা দেন বক্তাবলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ ন ম ওলী উল্লাহ।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে অপহরণকারীরা আমাকে ও আমার ছেলেকে অটোরিকশাকে করে প্রথমে নিয়ে যায় ধর্মগঞ্জ গুদার ঘাট এলাকায়। পথের মধ্যেই আমার প্রতি চলে নির্যাতন। উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমি চিৎকার দেয়ার সাহসও হারিয়ে ফেলি। সেখানে অপহরণকারী দলের সদস্য আসিফের খালার বাড়িতে নিয়ে আমার প্রতি চালায় অমানুষিক নির্যাতন। তারা জোর করে পদত্যাগ পত্রে আমার স্বাক্ষর নেয়। পরে তারা আমাকে নিয়ে যায় বক্তাবলী মাদ্রাসায়। সেখানে আমার উপর চালায় নির্যাতনের ষ্টিম রোলার। একই সময় তারা আমার ছেলেকেও বেদম মারধর করে। তারা আমার নাকে মুখে গরম পানি ঢেলে দেয়, আমার অন্ডকোষে চাপ দেয়। পরে তারা একটি ষ্ট্যাম নিয়ে আসে তাতে লেখা আমি যেন কোন মামলা দায়ের না করি। কিন্তু তাদের কথা না শোনার সারারাত আমার উপর থেমে থেমে নির্যাতন চালানো হয়। এক সময় আমি নির্যাতনে কারনে অজ্ঞান হয়ে পড়ি । পরের দিন আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এদিকে অপহরনের পর রাতভর নির্যাতন করে জোরপূর্বক পদত্যগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়ার ঘটনায় মুফতি মোখতার হোসাইনকে প্রধান আসামী করে ২১জনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতিত অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহ। বুধবার রাতে ফতুল্লা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। ফতুল্লা থানার এস আই মফিজুল ইসলামকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম, তানভির হোসেন, কাউসার মাহবুব, মধ্যনগর এলাকার শওকত আলীর পুত্র তানভীর, সালাহ উদ্দিনের পুত্র কাউসার মাহবুব,ফজর আলীর পুত্র এমরান, আওলাদ হোসেনের পুত্র ফয়সাল ,আব্দুল আউয়ালের পুত্র মিজানুর রহমান সেলিম,আব্দুল কাদেরের পুত্র নাহিদ। এছাড়া অন্যান্য আসামীরা হলেন, রফিকুল ইসলাম, ইমন, সাঈদ, জায়েদ আলম ইফতি, মিলন, রায়হান , রাতুল, আসিফ, তালহা জোবায়ের, জাহাঙ্গীর, জুয়েল, মতিন খান, সাইফুল খান।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, প্রধান আসামী মোখতারের নির্দেশে এবং সহযোগিতায় রোববার রাত ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে অটো রিকশায় করে তাকে অপহরণ করে বক্তাবলী এলাকায় নিয়ে যায় আসামীরা। তারা ২০লাখ টাকা চাদা দাবী করে। টাকা দিকে অস্বীকার করলে তারা সেখানে প্রথমে ধর্মগঞ্জ ঘাটের সামনে সিপাইপাড়া আসিফ এর খালার বাড়িতে নিয়ে বেদম মারধর করে গলায় গামছা পেছিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এবং জোরপূর্বক রিজাইন লেটারে স্বাক্ষর নেয় নেয় । পরবর্তীতে বক্তাবলী মাদ্রাসায় এনে সারারাত নির্যাতন করে। একই সময়ে তারা ওলী উল্লাহ পুত্র আবদুল্লাহ আল ফুয়াদকে বেদম মারধর করে। আসামীদের নির্যাতনে অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন সোমবার তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফতুল্লা থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহ পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় , নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কার্যালয়ে রোববার বিকেলে ওলী উল্লাকে ডেকে নেন নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও । সেখান ওলী উল্লাহকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। তিনি এতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে ইউএনও তার কার্যালয় থেকে চলে যায়। এর কিছুক্ষন পরই মাগরিবের নামাজ পড়তে উপজেলা কার্যালয়ের মসজিদে যান অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহ । নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর পরই আসামীরা তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়।
এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহকে অপহরন ও নির্যাতন করার আগে আসামীরা মোখতার হোসেনর সাথে বৈঠক করে। এছাড়া আসামীদেরকে অপরাধ কান্ডে সহায়তা হিসেবে মোখতার হোসেন আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা অভিযোগ রয়েছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর আসামীর তালিকা থেকে বাচতে মোখতার হোসেন নানা রকম ফন্দি ফিকির শুরু করেছেন। আইনগত অপরাধ হলেও শিশূদের দিয়ে মানবন্ধন করিয়েছেন। এছাড়া জোরপূর্বক অনেককে মানবন্ধনে থাকার জন্য বাধ্য করেন মোখতার হোসেন।
অধ্যক্ষ ওলী উল্লাহ জানান, আমার প্রতি ধারাবাহিক নির্যাতন হচ্ছে। আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। তিনি জানান, বুধবার রাতে ইউএনও মহোদয়ের সাথে তার কথা হয়েছে। ইউএনও তাকে বলেছেন, মাদ্রাসায় কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আগামী রোববার অধ্যক্ষ ওলী উল্লাকে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকেছেন বলেন জানান তিনি।