খুলছে রপ্তানীমুখী পোশাক কারখানা। কারখানা খুলে দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারায়নগঞ্জে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় করে চাকুরী বাঁচানোর আশায় ছুটে এসে কর্মস্থলে যোগদান করেছে।
যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থাকলেও এসব শ্রমিকের কাছে চাকরি রক্ষা করাটা বেশি প্রয়োজন বলে জানান তারা।
রোববার সকালে কর্মস্থলে যোগদানের সময় কথা হয় পায়ে হাটা একাধিক শ্রমিকের সাথে। তারা বলেন একদিনের নোটিশে চাকুরি বাচানোর জন্য রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি এমনকি পায়ে হেটে তারা এসেছে। সেই ধকল কাটিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করছেন তারা।
গার্মেন্টস থেকে ফোন পেয়ে লালমনিরহাট থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা দেন ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরীর একটি রফতানিমুখী গার্মেন্টসের শ্রমিক রিনা বেগম। শনিবার বিকেলে রওনা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে পৌছান রোববার ভোররাতে। সকাল ৯টার মধ্যে তাকে কাজ যোগদান বাধ্যতামুলক করে কর্তৃপক্ষ।
বিসিক ৩ নং গেটে কথা হয় রিনার সাথে। তিনি জানান, কষ্ট আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বিষয়ে কথা বলে শেষ করা যাবে না।ভেবেছিলাম ৫আগষ্ট গার্মেন্টস খুলবে তাই একটু নিশ্চিন্ত ছিলাম। হঠাৎ করে শনিবার সকালো গার্মেন্টস থেকে ফোন রোববার কাজে যোগদান করাই লাগবে। কি আর করা কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ ভ্যানে করে, বাকী পথ একটি মালবাহী ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। আমার মতো আরো ২০/২৫ জন ছিল সবাই একসাথে আসি।
রিনার মতো হাজার হাজার শ্রমিক হঠাৎ গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার বিপাকে পড়ে। পেটের দায়ে সব কষ্ট হজম করে কাজে যোগদান করে তারা।
সরেজমিনে বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায় সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক বিভিন্ন কলকারখানায় তার কর্মস্থলে ফিরছে। এদের কারো মুখেই হাসি নেই। রয়েছে রাগ হ্মোভ আর বিষন্নতার চাপ।
গার্মেন্টস শ্রমিক রোকেয়া বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের শ্রম আর ঘামে গার্মেন্টস চলে। অথচ মালিকরা আমাদের মনে করে না। যে কষ্ট করে কুস্টিয়া থেকে এসেছি এটা বলতে গেলে আরো কষ্ট বাড়বে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক ছাড়াও আদমজী ইপিজেড, কাঁচপুর শিল্পনগরী, রুপগঞ্জসহ বিভিন্ন শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছে।
শিবুমার্কেট এলাকায় কথা হয় গার্মেন্টসের একজন কর্মকর্তার সাথে। অমল সেন নামের ঐ কর্মকর্তা জানান, এরকম পরিস্থিতি মালিকরা তৈরী না করলেও পারতো। ১আগষ্ট গার্মেন্টস খুলে দিবে এটা আগে জানালে মানুষের এত হয়রানি আর দুর্ভোগের শিকার হতে হতো। করোনার ভয় অনেক আগেই চলে গেছে এখন ভয় চাকরি হারানোর।