নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে অস্থির হয়ে উঠেছে কাঁচাবাজার। টমেটো-মরিচ-পেঁয়াজ-করলা-আদা-রসুন-গাজর-কাকরোল-কহি-কুমড়া-ঢেড়শসহ বিভিন্ন সবজিতে সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। তবে দেশীয় সবজির চাইতে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সবজির দাম কিছুটা বেশি।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে নগরীর দ্বিগুবাবুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা বাজার ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সবজির দর দাম করছেন। পছন্দ হলে সাধ্যনুযায়ী সবজি-মাছ-মাংস কিনছেন। তবে অন্যান্য সময়ের চাইতে ক্রেতাদের চাপ কম বলে জানান বিক্রেতারা।
ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, বাজারে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রির দাম বেশি। বন্যা, বৃষ্টি বলে নানা অজুহাতে দাম ছাড়ছে না বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, বৈরী আবহাওয়া ও বন্যার কারণে বিভিন্ন জায়াগা থেকে সবজির সরবরাহ কম। বেপারীদের থেকে আগের চাইতে কিছুটা বেশি দামে পণ্য নিতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে জানা যায়, পেঁয়াজ কেজিতে ১১০-১১৫ টাকা, মরিচ ২০০-২৪০ টাকা, ডায়মন্ড আলু পাল্লায় ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও টমেটো কেজি প্রতি ১৬০-১৭০ টাকা, রসুন দেশি ২৪০ টাকা ও বিদেশী ২২০ টাকা, উস্তা ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৪০ টাকা, লাল শাক কেজিতে ৬০ টাকা, লাউ শাক আটি প্রতি ৪০ টাকা, পুই শাক কেজিতে ৪০ টাকা, ডাটা শাক কেজিতে ৪০ টাকা, মুলা শাক কেজিতে ৪০ টাকা, শাপলা ফুল আটি প্রতি ২০ টাকা, শশা কেজিতে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, পেপে ২৫ টাকা, বেগুন লম্বা ৬০ টাকা, লেবু (চায়না) হালিতে ১০-২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আলু বিক্রেতা জানান, আমরা সপ্তাহখানেক আগে যে ডায়মন্ড জাতের আলু এনেছি, তা ২৫০ টাকা পাল্লায় বিক্রি করছি। আলুর দাম খুব একটা পরিবর্তন হয় নাই। লাভ অনেক কম এখন। তবে বৈরী আবহাওয়া ও বন্যার কারণে সামনে আলুর সরবরাহ কিছুটা কম হতে পারে।
মরিচ বিক্রেতা জানান, মরিচ দুইদিন আগে কেজি ১৭০ টাকা কিনে একাধিক ক্রেট নিয়েছি। আজ মঙ্গলবার সকালে বেপারীর কাছ থেকে ১৯০ টাকা করে ইন্ডিয়ান মরিচ নিয়েছি। সেই মরিচ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।
বাজার করতে আসা ক্রেতা বলেন, বন্যা-বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি রাখছে বিক্রেতারা। আগে ছাত্ররা বাজারে এসে কয়েকদিন বিক্রেতাদের পণ্যের দাম কম রাখতে বলেছেন। তখন জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম ছিল। এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজ, টমেটো, গাজরে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। মূলত, পণ্যের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলে দুর্ভোগ থেকে সাধারণ মানুষরা রেহাই পাবেন।
শাক বিক্রেতা বলেন, আজকে সকালে পুই শাক, ডাটা শাক, মূলা শাক, লাল শাক তুলেছি। বেশিরভাগ শাক বৃষ্টির কারণে চুপসে গেছে। তাই যে দামে কিনছি সেই দামে বিক্রি করে দিচ্ছি। পুই শাক কেজিতে ৪০ টাকা, ডাটা শাক কেজিতে ৪০ টাকা, মুলা শাক কেজিতে ৪০ টাকা, শাপলা ফুল আটি প্রতি ২০ টাকা করে বিক্রি করছি।
আরেক বিক্রেতা বলেন, দেশী সবজির চাইতে বিদেশ থেকে আমদানি করা সবজির দামে কোন লাগাম থাকছে না। ইন্ডিয়া, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন সবজি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রেটে আমাদের নিতে হয়। দেশের বড় ব্যবসায়ীরা যারা এ সবজিগুলো দেশে আনেন, তারা একসাথে বসে মূল্য নির্ধারণ করলে এ সবজিগুলোর দাম স্থির হবে অনেকটা।
সবজি ছাড়াও চাউলের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, আটাশ কেজিতে ৫৮-৬০ টাকা, লতা ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৬৯-৭২ টাকা, নাজির সাইল ৭০-৭৪ টাকা, চিনিগুড়া ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরবঙ্গ, কুষ্টিয়া, শেরপুর, নওগা থেকে আমরা চাউল পাই। সপ্তাহ ধরে বৈরী আবহাওয়ায় অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাল কিনেছেন। বর্তমানে চাউলের সরবরাহ কমে গেছে, যার দরুণ দাম বাড়তির দিকে।
তবে স্থির রয়েছে বিভিন্ন ডালের দাম। ডালের খুচরা দাম হলো, মসুর ডাল (মোটা) ১০৮-১১০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৩০ টাকা, মুগ ডাল কাচা ১৬০, মুগ ডাল বাছা ১৯০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, খেশারির ডাল ১০০ টাকা, এঙ্কর ডাল ৭৫ টাকা, চনা বুট ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় সরবরাহে তেমন পরিবর্তন হয়নি। ডালের দাম স্থির রয়েছে। তবে আগের চাইতে ক্রেতাদের চাপ কমে গেছে।
এদিকে, মাংসের বাজারে ঘুরে দেখা যায়, মুরগির মাংস প্রায় দুসপ্তাহ ধরে স্থীর রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২১০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩২০ টাকা, প্যারেন্ট খাসী মুরগি ২৮০ টাকা, প্যারেন্ট খাসি মোরগ ৩২০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে। আমাদের কাছে ঢাকা থেকে মুরগির সাপ্লাই আসছে। এর উপর বন্যা কবলিত এলাকা থেকে অনেক খামারের মালিক কিছুটা কম দামে মুরগি বিক্রি করছেন। সামনে আরও কয়েকদিন মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকবে।
এক মাসের ব্যবধানে গরু ও খাসির মাংসের দাম কমে নি। মাংস কেজিতে ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কলিজা ৬৮০-৭০০ টাকায়, মাথা ৪০০-৪৫০ বিক্রি হচ্ছে। খাশির মাংস কেজিতে ১০০০ টাকায়, কলিজা ২৫০ টাকায়, মাথা ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে জানা যায়, মুরগির লাল ডিম খুচরা হালিতে ৫২ টাকা (পাইকারি ৫০), মুরগির সাদা ডিম ৫০ টাকা, হাশের ডিম ৭০ টাকা, দেশি কক মুরগির ডিম ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ডিম কিনতে আসা ক্রেতা বলেন, মাংসের দাম বেশি বলে ডিম নিচ্ছি। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়ত আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো কষ্টকর হবে।