নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করবো। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, জাতির ক্রান্তি লগ্নে আমরা যেন জনগণের জান-মাল সম্পদহানী হয় এমন কোনো কাজ কে না করে।
তার জন্য অতন্দ্র প্রহরির মত যেন কাজ করি। আমরা জনগণ, দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। এই কমিটমেন্ট আপনাদের সাথে থেকেই রক্ষা করবো। আমরা নারায়ণগঞ্জে সুন্দর পরিবেশ চাই।
নারায়ণগঞ্জে স্বৈরাচারের বড় একটি আখড়া ছিল। এমন এক ব্যক্তিত্ব ছিল যাকে সমস্ত দেশবাসী, সারাপৃথিবী চিনে জানে। তাদের সাথে যারা উঠাবসা করেছেন, দয়া করে পর্দার আড়ালে থাকেন। হতে পারেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক আমরা সবাইকে চিনি, সকলের ছবি আছে। কোথায় কি করেছেন রেকর্ড আছে।
এ সময় আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে না। আপনারাও সংশোধন হন এটা আমরা চাই। আপনাদের নিয়েও আমরা কাজ করবো, আপনারা যখন বুঝবেন, অন্যায় স্বীকার করবেন আপনাদের নিয়ে কাজ করবো। এখন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মস্তিষ্ক বুঝার চেষ্টা করবেন। আপনারা কম কথা বলেন, সমাজে বেড়িয়ে আসেন।
আমরা দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে ছিলাম, মানবেতর জীবন-যাবন করেছি। এখনই আপনারা নিজেদের বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। আপনাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করবো, নারায়ণগঞ্জকে গড়বো, দেশ গড়বো। বাস্তবিক অবস্থা না বলি তাহলে মুনাফিক হয়ে যাবো।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, ত্বকী হত্যার মামলা রয়ে গেছে। এগুলো স্পষ্ট কারা করেছে। এই স্বৈরশাসনের সময় সেগুলো প্রকাশিত হয়নি এবং শান্তির আওতায় আনা হয়নি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি এখন সেগুলো হবে। উপযুক্ত সময়, নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, ভাবমুর্তি নষ্ট করা হয়েছে। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ে প্রশাসন, ও বিচার বিভাগ সুন্দর, স্বাধীনভাবে গড়ে উঠুক। ন্যায়, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করুক। আমরা সহযোগিতা করার জন্য যেমন আজকে ডেকেছেন এসেছি ইনশাল্লাহ আগামীেেতও ডাকবেন আসবো।
অভিনন্দন জানিয়ে, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততোদিন পর্যন্ত তাদের এই ইতিহাস গৌরবের সাথে বাংলার মানুষ স্মরণ করবে। এই তরুণ, ছাত্রদের ভূমিক বাঙালি জাতির ঐতিহ্য সামনে এনেছে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে সেক্ষেত্রে আমরা তেমন ভূমিকা পালন করতে পারিনি।
এই স্বৈরশাসক গত ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বারবার বলে, ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রেখে ব্যবহার করেছে। মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বলতে গেলে, আমরা লজ্জাবোধ করি। এমনভাবে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করেছে তা না বলে মুক্তিযোদ্ধের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল সে ইতিহাস সবার জানা। কিন্তু স্বৈরশাসক সেই ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিক্রি করেছে।
এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তারা অপমানিত করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, তারা কেন তাদের সন্তানদের কাপুরুষ বানাবে। তারা কেন কোটার মাধ্যমে চাকরি নিবে। তারা নিজেদের দলভুক্ত মানুষদের কিভাবে দিবে সেজন্য কোটা রেখেছিল। আজ স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এত অন্যায়, গুম-খুন, লুটপাট হয়েছে এই পাপের ভারে এমন ভারী হয়েছে যে আল্লাহ সহ্য করে নাই।
দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়ে প্রশাসন তাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন আনবে এ প্রত্যাশা রাখি। প্রশাসনে অনেক ভালো কর্মকর্তা থাকার পরও স্বৈরশাসকের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন চিন্তা চেতনার পরিবর্তন আনবেন।
এ সময় তিনি কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
কোটা আন্দোলনে আহত, নিহতদের তালিকা প্রস্তুত, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, গত ১৫ বছরে মিথ্যা মামলার আইনগত সমাধান, এই আন্দোলনে নিহতদের মাসিক ভাতা, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, আন্দোলনে যারা গুলি, লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে, পুলিশ বাদী হয়ে করা মিথ্যা মামলা পরিবর্তে প্রকৃত মামলা দিতে হবে, প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের তালিকা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা গ্রেপ্তার বাণিজ্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতাসীনরা মাদকাসক্ত, সন্ত্রাসী তৈরী করেছে। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দ নিয়ে পৃথক বৈঠক করে তাদের দাবি ও অভিযোগ শুনে তা আমলে নিতে হবে।