সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি ঘোষণা করেনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এনিয়ে হতাশ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমিটি দিবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। যদিও ঢাক ঢোল পিটিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন গত ৩১ জুলাই শহরের খানপুর হাসপাতালে রোডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে পদ পদবী পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাছাড়া জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে নিতে তৎপর ক্ষমতাসীন দলের তিন সাংসদ। এছাড়াও নিজেদের পছন্দের লোককে কমিটিতে অন্তভুক্ত করতে তৎপর রয়েছেন নাসিক মেয়র, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা। অপর একটি সুত্র জানায়, শীর্ষ দুই সাংসদের মধ্যে সমঝোতা হলে হয়তো অচিরেই ঘোষিত হবে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি।
দলীয় সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রথম বারের মতো সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল গত ৩১ জুলাই। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে সর্বত্র উৎসব ও আমেজের কমতি ছিল না। সম্মেলনের তৈরি করা হয়েছিল বিশাল প্যান্ডেল ও মঞ্চ। রংবেরংয়ের পোস্টার ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলা হয় নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলী। এছাড়াও সারা শহরে আমন্ত্রিত অতিথিসহ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও সম্ভাব্য সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের ছবিসহ রং বে-রঙের ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগানো হয়। প্রধান প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হয় বড় বড় তোরণ।
কিন্তু সম্মেলনের শেষে কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে আয়োজিত সম্মেলনের পর কমিটি ঘোষণা না করায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃনমুল নেতা-কর্মীরা।
তারা বলছেন, সম্মেলনের পর পর কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। মূলত একটি পক্ষকে খুশি করতেই সম্মেলনের দিন কমিটি ঘোষণা দেননি তারা। সম্মেলনে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিল অনেক নেতা-কর্মী। নতুন করে দলকে গুছাতেও কাজ শুরু করেছিল তারা। তবে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন শেষে হতাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানায়, সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন, ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ছগির আহম্মেদ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সদ্য ঘোষিত সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া খোকন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামির হোসেন রনি।
আর সম্মেলনে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাহের উদ্দিন আহমেদ সানি। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মারুফুল ইসলাম মহসীন,সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কায়কোবাদ রুবেল।
গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীলসহ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। মোটকথা এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের মিলন মেলা হয়।