বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেছেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নেই। আছে শুধু গুম খুন। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশকে গুম খুনের রাজ্যে পরিনত করে। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) ফতুল্লা পাগলা দেলপাড়ায় মীরকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ফতুল্লা থানা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, মমতাজ সংসদে বিদ্যুৎ নিয়ে মিথ্যাচার করেছিলেন। বিদ্যুৎ নাকি ফেরি করে বিক্রি করা হয়, কেউ নেয় না, কই সেই বিদ্যুৎ আজ আমরা পাইনা। সরকারকে বলতে চাই, পদ্মা ব্রিজ করেছেন খারাপ কিছু করেননি কিন্তু ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকার সেতুর বাজেট ৪৫ হাজারে নিয়ে গেছেন।
লুটপাট করে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন। আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এই দেশে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এক পীর সাহেবকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
অথচ ইসি বলে তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি আওয়ামী শপথ নিয়ে চেয়ারে বসেছেন। তার মতো আওয়ামী ইসির অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবো না।
সকালে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এসময় শান্তির প্রতীক পায়রা আকাশে উড়িয়ে দেন অতিথিরা।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু বলেন, দলকে গতিশীল রাখতে হলে সম্মেলন সঠিক সময়ে করতে হয়। তাহলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো আমাদের আদর্শের কারনে।
আমরা গণতন্ত্রের পাহারাদার। বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে যখন গণতন্ত্র হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এরশাদ গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা করেছিল। সেদিন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
সারা বিশ্বে পরিচিত হয়েছিলেন আপোষহীন নেত্রী হিসেবে। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের শাওন নিহত হয়েছে। গত আগষ্ট থেকে আমাদের ১৭ জন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই। কারণ জনগন তাদের নির্বাচিত করেনি।
বিশেষ বক্তা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক বলেন, ফতুল্লার সম্মেলনের জন্য যেখানে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল এই সরকারের পেটোয়া বাহিনী, যুবলীগ ছাত্রলীগ সেখানে প্রোগ্রাম দিয়েছে। ফতুল্লা বিএনপি শক্তিশালী বলেই মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই ভেন্যুতে সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছে।
দেশের মানুষ ভালো নেই, হাহাকার চলছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ নেই। আগের যুগে ফিরে গেছি আমরা। বাজারে গিয়ে তেল কিনলে নুন কিনতে পারে না। সবার মাঝেই হাহাকার আজকে। মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে। নিশীরাতের সরকার গণতন্ত্র হরণ করেছে। দলের মধ্যে হানাহানি গ্রুপিং থাকতে পারবে না। আমাদের মূল সমস্যা গ্রুপিং। এটা কাম্য না। আমাদের বড় পরিচয় আমরা জিয়ার সৈনিক।
সম্মেলনের উদ্বোধক জেলা বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, মানুষ আজ কষ্টে আছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উর্ধ্বগতি। নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সুদূর লন্ডনে বসে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এই সময় এমন একটা সম্মেলন করা খুবই কঠিন তা আপনারা জানেন। সরকারের লোকজন আমাদের এক জায়গায় বসে আলোচনাও করতে দেয় না। এই সম্মেলন আরো অর্থবহ হতো কিন্তু সরকারী পেটোয়া বাহিনীর কারনে সেটা হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি।
আমাদের জেলা সম্মেলন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রশাসন, তাদের সন্ত্রাসী মাস্তানী বাহিনীকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে যেনো সম্মেলন করতে না পারি।
তিনি বলেন, তারা ব্যাক্তি স্বার্থে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে। জনগনের উন্নয়ন করেনি। তারা উন্নয়ন করেছে নিজেদের পেট ভরার জন্য। মেগা প্রজেক্টের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আর সে কারনে জনগনের দুখ কষ্টের মধ্যেও তাদের কোন চিন্তা নেই। বিদ্যুতের দাম অনেক বেড়েছে৷ জনগন প্রতিমাসে বিল দেয়। সেই বিলের টাকা দিয়ে কেন জ্বালানি কেনা হলো না?
জ্বালানি কিনলে আজ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতো না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ রাস্তায় চাঁদাবাজি। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দেয়ার কারনে জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তারা লুটপাট করেনি। আর এর খেসারত দিচ্ছে জনগন। তাদের লুটের বিরুদ্ধে আজ আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে মাঠে আছি। জনগন বুঝে গেছে কে বন্ধু আর কে শত্রু।
জনগন চাচ্ছে এই সরকার দ্রুত বিদায় নিক।বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। ক্ষমতায় কে যাবে না যাবে সেটা জনগন জানে৷ তারা যাকে ভোট দেবে সে দলই ক্ষমতায় আসবে। আপনারা নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেখুন। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
এর আগে সকাল থেকেই ফতুল্লা থানা বিএনপির ৫ টি ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই শ্লোগানে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে হাজির হতে থাকেন।
ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়ার সঞ্চালয়নায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব, যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান খোকা, যুগ্ম আহবায়ক মো. জুয়েল আহম্মেদ।
এ ছাড়া অন্যানদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, সদস্য রুহুল আমিন শিকদার, নজরুল ইসলাম মাতবর, ফতুল্লা থানা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদ, সদস্য সচিব সালাউদ্দিন রানা, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাগর সিদ্দিকী, থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ প্রমুখ।