নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধীগঞ্জ থানাধীন লক্ষীনারায়ন কটন মিল পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
এ সময় স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন অভিযোগ করেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহালয়া অথচ এখনো পর্যন্ত আমরা মন্ডপ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারিনি।
আমাদের নির্মাণ সামগ্রী ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না মিল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মন্ডপ নির্মাণ কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন এডভোকেট সাখাওয়াত।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে লক্ষীনারায়ণ পূজা মন্ডপে ছুটে যান তিনি।
স্থানীয় ভক্তবৃন্দের প্রতি এডভোকেট সাখাওয়াত বলেন, যেহেতু পূজা শুরু হয়ে গেছে সেহেতু আগে পূজা আয়োজনের ব্যবস্থা করুন। পূজা শেষ হলে আমরা মিল কর্তৃপক্ষের সাথে বসে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করে দেবো।
আপনারা চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার আয়োজন করুন, শারদ উৎসবে শামিল হোন। আমরা আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি এবার আপনাদের মন্দিরের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত লক্ষীনারায়ণ কটন মিলটি বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের খুনি গডফাদার নাসিম ওসমান ও তার ভাই শামীম ওসমানের সহায়তায় দখল করে নেয় নারায়ণগঞ্জে চিহ্নিত ভূমিদস্যু নীট কর্নসার্ন গ্রুপের মালিক জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর মোল্লা।
মিল অভ্যন্তরের সকল স্থাপনা ভেঙে ফেললেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দীর্ঘদিনের পুরাতন মন্দিরটি রক্ষার জন্য মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দ তখন থেকেই আন্দোলন করতে থাকে কিন্তু সু-চতুর জয়নাল মোল্লা ও জাহাঙ্গীর মোল্লা তৎকালীন এমপি নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করে ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের টাকা খাইয়ে সেই মন্দিরের জায়গাটুকুও দখল করে নেয়।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবি মন্দিরের জায়গা দেবোত্তর সম্পত্তি, তা কখনো বিক্রি করা যায় না বা হস্তান্তর করা যায় না। মিল কর্তৃপক্ষ যদি মিলটি বিক্রি করে থাকে কিন্তু মন্দিরের জায়গা তো বিক্রি করে নাই। তাহলে আমাদের মন্দিরের জায়গা কেন দখল করা হলো, আমাদেরকে কেন ধর্মীয় উপাসনা করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে?
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর দুর্গাপূজা এলেই প্রশাসনের লোকজন এখানে আসেন এবং জয়নাল মোল্লা ও জাহাঙ্গীর মোল্লার কাছ থেকে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে কোনো রকমে দুর্গা পূজাটুকু উদযাপন করার জন্য সুযোগ করে দেন, বছরের বাকি সময় সাধারণ মানুষ সেই মন্দিরে যেতে পারেন না।
এবার আর তারা কোনো সাময়িক সমাধান মানবেন না, তারা চান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান। তাদের দেবোত্তর সম্পত্তি তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার দাবি জানান স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে করে সারা বছর তারা মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় উপাসনা করতে পারেন।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব সফল করতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ লক্ষী নারায়ণ কটন মিল অভ্যন্তরের পূজা মন্ডপের বিষয় স্থায়ী সমাধান দাবি করেন।
তখন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক এবং পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তাদেরকে কথা দেন তারপর দিন শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে তারা যাবেন এবং সশরীরে পরিদর্শন করবেন।
কথা মতো শুক্রবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার লক্ষীনারায়ন কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্দিরের জায়গাটি পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দের সাথে কথা বলেন। সকলের দাবি এবং অভিযোগ তারা শোনেন এবং সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এবার স্থায়ী সমাধান করার আশ্বাস প্রদান করেন।