নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৩ নভেম্বর ২০২৪

আনু হত্যাকান্ডে কারাবন্দি ছেলে-মেয়ে, ভাড়ার লাখ টাকা নিচ্ছেন স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২১:২২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আনু হত্যাকান্ডে কারাবন্দি ছেলে-মেয়ে, ভাড়ার লাখ টাকা নিচ্ছেন স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জের বর্তমান সময়ে আলোচিত ঘটনা হলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর মৃত্যুর ঘটনাটি। আনুর মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের রহস্য।

 

পিতা হত্যার দায়ে ছেলে-মেয়েকে আসামি করে জেলহাজতে প্রেরণ করে এখন বাড়িঘর নিয়ন্ত্রণ করে লাখ লাখ ভাড়ার টাকা নিয়ে যাচ্ছেন ভাই আবুল কাশেম বাদশা, নুর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর মনির হোসেন এমনটাই তথ্য পাওয়া গেছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে রয়েছে নিহত আনোয়ার হোসেন আনুর ৩৩ শতাংশ জায়গার উপর বিশাল টিনশেড ও ভিটি পাকা ঘর এবং বেশকিছু দোকান। সব মিলিয়ে সেখানে ছোট-বড় একশোর মতন ঘর রয়েছে। এ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া আসে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। আনুর বাবা তাকে এই জায়গাটি লিখে দিয়েছিল। 

এই বাড়ি ভাড়া দিয়েই আনু ও তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করছিল। কিন্তু এই ৩৩ শতাংশ এইজমি নিয়ে আনু সঙ্গে ভাইবোনদের বিরোধ ছিল। এরপর থেকে জের ধরে অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আনু তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে জামতলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ সংলগ্ন মাসদাইর আদর্শ স্কুল রোডে হেলেনা কটেজ নামে একটি বহুতল ভবনের ৯ তলায় ভাড়া থাকতেন। তার স্ত্রী চার বছর আগেই ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- গত ২৬ অক্টোবর আনোয়ার হোসেন আনুর মৃত্যুর পরই তার ভাইয়েরা ভাইয়ের মৃত্যুর শোক প্রকাশ না করে উল্টো তার বাসা থেকে আনুর মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা ৬০-৭০ ভরি স্বর্ণের গহণা, নগদ ২০-২৫ লাখ টাকা ও তার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিয়ে চলে যান। আর পিতা হত্যার দায়ে আনু ছেলে ও মেয়েকেও এ মামলার আসামি করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তার ভাইয়েরা।  

আর এনায়েতনগর ইউনিয়নের তার ৩৩ শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত বাড়িটি দখল করে নেন। সেখানকার ভাড়াটিয়া ও ম্যানেজারকে বলে এসেছেন এখন থেকে বাড়ির ভাড়া তাদের দিতে। আর ভাইয়ের ছেলে-মেয়েদেরকে বাবা হত্যার আসামি বানিয়ে দিয়ে সহজে নিচ্ছেন টাকা। 

সরজমিনে গিয়ে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। বাড়ির ম্যানেজার দুলাল মিয়াকে আনোয়ার হোসেন আনুর বাড়িভাড়াসহ সমস্ত টাকা ভাই বাদশা মিয়াকে দেওয়ার জন্য বলেন সকল ভাইয়েরা। এর থেকে আগস্ট মাসের বাড়িভাড়া ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বড় ভাই বাদশা মিয়ার কাছে গিয়ে দিয়ে আসেন ম্যানেজার দুলাল মিয়া। 

এ বিষয়ে বাড়ির ম্যানেজার কুড়িগ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, গত ২৬ শে আগস্ট আনু মিয়া মারা যাওয়ার পরে তার ভাইয়েরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাদশা মিয়ার কাছে বাড়িভাড়ার সমস্ত টাকা দেওয়ার জন্য। আমি বিদেশী মানুষ আমি কি বলবো। পরে আমি সমস্ত বাড়িভাড়ার টাকা বাদশা মিয়াকে বুঝিয়ে দিই। 

এ মাসে আমি ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদেরকে হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। আর কারেন্ট বিল ও গ্যাস বিলে কাগজপত্র তাদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি তারাই দিবে বলছে। তারা বলেছে তুমি ম্যানাজার যদি কাজ করো করতে পারো সমস্যা নাই। আমাদের ভাইয়ের জায়গা বাড়ি ভাড়া যা উঠবো আমাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে। 

তিনি আরও বলেন, কিন্তু এই টাকা নিতে তারা এখানে আসেনা তারা বলছে টাকা উঠিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতে আমি বাসায় গিয়ে তিন ধাপে টাকা দিয়ে এসেছি। একবার ৮৪ হাজার আরেক বার ৭৩ হাজার বাসায় নিয়ে দিয়ে এসেছি। আবার পাঁচটা দশটা ঘর ভাড়া উঠছে সেই টাকা নিয়ে দিয়ে এসেছি।

এর আগে এই বাড়ি ভাড়ার টাকা নিতো আনুর ছেলেমেয়েরা। আরে এক মাস ধরে এ বাড়ি ভাড়ার সম্পূর্ণ টাকা আনুর ভাই বাদশা মিয়াসহ তার ভাইরে নিচ্ছে। আর এই বাড়ি থেকে মোট ভাড়া আসে তিন লক্ষ পনেরো হাজার টাকার মতো। কিছু ঘর ও দোকান খালি থাকা সম্পূর্ণ ভাড়া উঠে না। 

উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট দুপুরে ছেলে-মেয়েকে দুপুরের খাবার রেডি করতে বলে হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। সন্ধ্যায় শহরের জামতলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে অবস্থিত একটি বিল্ডিংয়ের লিফটের ফাঁকা অংশ থেকে আনোয়ারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট নিহতের বড় ভাই আবুল কাশেম বাদশা মিয়া ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন- ফতুল্লা বিসিক মার্টিন গার্মেন্ট গলির গোল মোহাম্মদের ছেলে ঝুট সন্ত্রাসী রাসেল মাহমুদ (৪২), নিহতের সাবেক স্ত্রী বর্তমান রাসেল মাহমুদের স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্না (৪২), মাসদাইর আদর্শ স্কুল রোড (হেলেনা কটেজ এর ৯ম তলার ভাড়াটিয়া) নিহতের মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২১) ও ছেলে সারিদ হোসেন, বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়া ছেলে নুর আলম (৪৫), কাজল (৩২) ও মেয়ে রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬)।

আনোয়ার হোসেন আনুর হত্যার সাথে সাথেই ৬ জনকে আটক করে ফতুল্লা থানা পুলিশ । তারা হলেন- নিহত আনোয়ার হোসেনের মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২১) ও ছেলে সারিদ হোসেন (১৯), বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়ার ছেলে ও সাবেক স্ত্রী ভাই -বোন নুর আলম (৪৫), কাজল (৩২) ও রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬) ও কাজের মেয়ে।

এবিষয়ে কথা বলতে আবুল কাশেম বাদশা মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।