বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর হুকুমে ৫ আগস্ট আড়াইহাজার পৌরসভা বাজার এলাকায় ’দা’ হাতে মহড়ায় অংশ নিয়েছিল স্থানীয় ছাত্রলীগ ও তাদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা। তারা এখনো স্থানীয়দের আতংক।
সেদিন পুরো এলাকায় একটি মারমুখী ভুমিকায় ছিলো তারা। তাদের ‘দা’ হাতে প্রকাশ্যে মহড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, ৩ আগস্ট কৃঞ্চপুরা পায়রা চত্বর এলাকায় আড়াইহাজার সরকারী সফর আলী কলেজের শিক্ষার্থী ছোয়ার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা করা হয় সাবেক এমপি বাবুর হুকুমে।
হামলায় অংশ নেয় কাউসার, মামুন, নেভী, আশিক ও শরীফুল সহ আরও অনেকে। এসময় কাউসার এক শিক্ষার্থীদের মারধর করে একটি দোকানে আটকে রাখে ।
এছাড়াও আন্দোলনকারী ভয়ভীতি দেখাতে ও এলাকায় আতংক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফের নেতৃত্বে ‘দা’ সহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন।
এসময় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। ভয়ে বাজারের সাধারণ মানুষ দৌঁড়াতে থাকেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির (ঢাকা বিভাগীয়) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ আড়াইহাজারের তার দলীয় কার্যক্রম চালাতে নানভাবে বাধার সম্মুখীন হোন এই ক্যাডার বাহিনী দ্বারা।
যখন তিনি (আজাদ) আড়াইহাজার পৌরসভা এলাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করতেন, তখনই সাবেক এমপি বাবুর হুকুমে এই বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির (আজাদ) এর নেতাকর্মীর ওপর দা, ছুরি ও হকিস্টিক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে এই চক্রের অনেক সদস্যের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। তারা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছেন। তাদের নিয়ে এখনো এলাকায় বিরাজ করছে আতংক। তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ সহ নির্যাতিত বিএনপির স্থানীয় নেতাকমীরা।
সরেজমিন গিয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, দুপুর আনুমানিক ১২টা থেকে ১টার দিকে হঠ্যাৎ ‘দা’ হাতে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি পৌরসভা বাজারে প্রবেশ করে মহড়া দিয়ে কৃঞ্চপুরা এলাকায় অবস্থিত সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়ির দিকে যেতে থাকেন।
মহড়ার অগ্রভাগে নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ ও আড়াইহাজার সরকারী সফর আলী কলেজের সাবেক ভিপি নিহাদুল ইসলাম রাজু।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট যেভাবে স্থানীয় এমপি ও তার নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন। এমন ঘটনা এর আগে আমি কখনই দেখিনি। বাজারের সব ব্যবসায়ীরা ভয়ে দৌঁড়াচ্ছিলেন। প্রায় ২ঘন্টা বাজারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
একটি ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছিল সাবেক এমপি বাবু। এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানান, ৫ আগস্ট ‘দা’ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল স্থানীয় শিবপুর, দিঘিরপাড়া, বাগানগর, নোয়াপাগড়া ও কৃঞ্চপুরা এলাকার এমপি বাবুর নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা।
এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ। সাবেক ভিপি নিহাদুল ইসলাম রাজু। পৌরসভা ছাত্রলীগ ক্যাডার স্থানীয় ঝাউগড়া এলাকার ইব্রাহিম মুন্সির ছেলে আবুল কালাম আজাদ। যুবলীগ ক্যাডার খাগকান্দা ইউনিয়নের চম্পক নগর এলাকার রব মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন।
পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দিঘিরপাড়া বারেকের ছেলে রুহুল আমিন নেভী। লাসরদী গোয়ালপাড়া এলাকার মৃত তাহের ছেলে সাজ্জিত সোহেল ও সন্ত্রাসী ইসলাম। ইসলাম ‘দা’ মহড়ার এক অংশের নেতৃত্বে ছিলো।
‘দা’ হাতে এই মহড়ায় আরও ছিলো ছাত্রলীগ ক্যাডার মৃত তাহের আলীর ছেলে ইসলাম। হোন্ডা চোর সিন্ডিকেটের সদস্য ও বাবুর ক্যাডার খ্যাত শিবপুর এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মামুন।
শিবপুর এলাকার আঃ রহমানের ছেলে সোহলে ও জাকারিয়া, কামরানীর চর হাটখোলা এলাকার আমজাত মোল্লার ছেলে ইমন মোল্লা। আড়াইহাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও দিঘিরপাড়া এলাকার মৃত শুকুর আলীর ছেলে বারেক মিয়া ‘দা’ মহড়ার এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে আড়াইহাজারের দিঘিরপাড়া এলাকার লোকজন জানান, বারেক মিয়া আওয়ামী লীগের ১৭ বছর ধরে এলাকায় এক ত্রাসের রাজুত্ব কায়েম করেন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের জমিজমা নানাভাবে জবরদখল করেন।
সিরাজ নামে বিএনপির স্থানীয় এক নেতা ৬ আগস্ট তার পৈত্রিক জমি বারেকের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে দখলে রাখে।
এছাড়াও বারেক এলাকায় নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০-১২টির মতো মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক এমপি বাবুর হুকুম দেওয়া মাত্রই এই চক্রটি বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতো।