নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২২ নভেম্বর ২০২৪

বুড়িগঙ্গায় তেলবাহি ট্রলারে অগ্নিকান্ডে আরও এক মরদেহ উদ্ধার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ 

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২৩:২৮, ২৮ জুন ২০২৪

বুড়িগঙ্গায় তেলবাহি ট্রলারে অগ্নিকান্ডে আরও এক মরদেহ উদ্ধার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে জ্বালানি তেলবাহি ট্রলারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ফখরুদ্দিনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক ইয়ার আলী। এরআগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নদীতে তল্লাশি করে মরদেহটি উদ্ধার করে পাগলা নৌ থানা পুলিশ। এ নিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হলো দুইজন। তবে এ ঘটনায় এখন আর কেউ নিখোঁজ রইলো না।  

গত বুধবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে আগুনের ঘটনায় এমভি মনপুরা নামে জ্বালানি তেলবাহি ট্রলারটিতে থাকা পাঁচজনের মধ্যে দগ্ধ হয়ে খোকন নামে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। কামাল নামে আরও একজন দগ্ধ অবস্থায় এবং বাকের মাঝি নামে ট্রলারের চালক সুস্থ উদ্ধার হন। পরে দগ্ধ কামালকে তাৎক্ষণিক রাজধানির শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

তবে এ ঘটনায় বাবুল মোল্লা ও ফখরুদ্দিন নামে দুইজন নদীতে ঝঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিখোঁজ বাবুল মোল্লাকে পাওয়া গেলে তাকে জেলা সদরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। ওই রাতেই স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপরও ফখরুদ্দিন নামে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন। 

পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইয়ার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার নিখোঁজ একজন ব্যক্তির সন্ধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে তল্লাশি চলাকালে রাত দশটার দিকে দূর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন ফতুল্লা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করি। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে ফখরুদ্দিনের লাশ বলে শনাক্ত করেন। তবে স্বজনরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের আবেদন জানালে সবার সম্মতিক্রমে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

এ বিষয়ে পাগলা নৌ থানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, ফখরুদ্দিন নামে উদ্ধারকৃত মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোঁড়া চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পেট থেকে নাড়িভূঁড়িও বের হয়ে ছিল। তবে মুখ মন্ডল ছিল অক্ষত অবস্থায়। 

উল্লেখ্য, ২৬ জুন (বুধবার) ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকায় মেঘনা অয়েল ডিপো থেকে তিন হাজার লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ট্রলারটি বরিশাল জেলার ভোলা থানার মনপুরা এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুপুরে জেটি থেকে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। ট্রলারটির চালক বাকের মাঝি ইঞ্জিন চালু করার সাথে সাথে একটি তেলের ড্রাম বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়।

এরপর একে একে বিকট শব্দে সবগুলো ড্রাম বিস্ফোরণ হলে পুরো ট্রলারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তেলের ড্রামগুলো বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠলে ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারি সহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রলারটিতে ৮৬ টি পেট্রোল ও ৭০ টি ডিজেল ভর্তি ড্রাম ছিল বলে জানায় ডিপো কতৃপক্ষ। 

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার পর পুঁড়ে যাওয়া ট্রলারটি ফতুল্লার পঞ্চবটি মেঘনা অয়েল ডিপোর জেটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। তবে সন্ধ্যার ঠিক আগ মূহুর্তে পুনরায় ট্রলারটিতে আগুন জ্বলে উঠে এবং আগের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নেয়।

এসময় আগুনে জেটির সাথে বেঁধে রাখা রশি পুঁড়ে গিয়ে ট্রলারটি নদীর ঢেউ ও প্রবল স্রোতের টানে অপর পাড়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ঋষিপাড়া এলাকায় তীরে গিয়ে ভীড়ে। তখনও ট্রলারটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদীর অপর পাড়ে গিয়ে রাত আনুমানিক নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনে। 

তবে পরবর্তীতে যাতে আগুন জ্বলতে না পারে সেই আশংকায় ট্রলারটি নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মুহম্মদ ফখর উদ্দিন। 

এদিকে, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ট্রলারের চালক বাকের মাঝি বাদি হয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইয়ার আলী। 

এছাড়া ২৬ জুন অগ্নিকান্ডের ঘটনা রাতেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।