রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন বিসমিল্লাহ আড়ৎতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে জোরপুর্বক প্রায় কোটি টাকা আদায় ও চুক্তি ভঙ্গ করে আড়ৎ দখলের পায়তারার অভিযোগ এনে ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আড়ত মালিক মজিবুর রহমান। শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে বিসমিল্লাহ আড়তে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আড়ত মালিক ডাক্তার মজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আড়ৎতের প্রায় ১৬ বিঘা জমি ভাড়া নেন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের কাছ থেকে। তখন জমি গুলো ডোবা ও নিচু ছিলো। মাসে প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিমাসে জমির ভাড়া আসে ৮ লাখ টাকা।
ভাড়া বায়নাসহ জমি ভরাট করে সাড়ে ৩শ’ দোকান নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। ডন সেলিম জেলে থাকাকালীন সময়ে মাসিক ভাড়া নিতেন তার প্রথম স্ত্রী মাসুমা বেগম ও পিএস হুমায়ুন আহাম্মেদ। নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ রয়েছে।
পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আড়তের দিকে নজর আসে ডন সেলিমের। লাভের মুখ দেখে আড়ৎ মালিক ডাক্তার মজিবুর রহমানের সঙ্গে কোন প্রকার কথা না বলেই আড়তের ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে জোরপুর্বক ভাড়া বাবদ প্রায় কোটি টাকা আদায় করেন এবং তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আড়ৎ দখলের পায়তারা করে আসছেন। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এ ব্যপারে সেলিম প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আড়তের জমির চুক্তিপত্রের ব্যপারে অস্বীকার করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, বিসমিল্লাহ পাইকারি কাঁচাবাজার ও ফলের আড়তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। আড়তে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সন্ত্রাসীরা যত প্রভাবশালীই হোক ছাড় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান। সেই দণ্ড থেকে মুক্তিলাভের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।
এদিকে সেই দণ্ড থেকে মুক্তিলাভের পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়ার কথা উল্লেখ করে গত ২৩ এপ্রিল সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর বিরুদ্ধে সেলিম প্রধান আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে গত ২৮ এপ্রিল নামঞ্জুর হয়। পরে আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। সেলিম প্রধানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল রুল দিয়ে হাইকোর্ট মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
একই সঙ্গে সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেন। এতে সেলিম প্রধানের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলেছিল।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী হাবিবুর রহমান আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এতে গত ২ মে চেম্বার আদালত সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন।
এরপর ৬ মে হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর নির্বাচনে ফিরতে চেম্বার আদালতের আদেশ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে আবেদন করেন সেলিম প্রধান। যা পাঠানো হয় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
পরে নির্বাচনে ফিরতে আপিল বিভাগে মামলা না চালানোর আর্জি জানালে আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।