নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে গণণধর্ষণের ঘটনায় ৪ যুববককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। তারা হলো-মোঃ আব্দুল্লাহ (২৪), তার সহযোগী মোঃ মতিন (৩৫), চাঁন মিয়া (২৮), ও মোঃ আয়নাল (২৫)। এরমধ্যে আব্দুল্লাহ, চাঁন মিয়া ও আয়নালের বাড়ি আড়াইহাজারে। মতিনের বাড়ি নরসিংদীর মাধবদীতে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে একটি মোবাইল, দেশীয় তৈরী একটি ওয়ান শুটার গান, ১টি শাবল, ১টি দা, ২টি রামদা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি জব্দ করা হয়।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান, র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা গণধর্ষণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ। এই চক্রে ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে। আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে তারা ১/২ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়। এছাড়া গত ১৫ মে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়িতে যায়। এসময় আব্দুল্লাহ ও মতিন জানালা ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় কিশোরী ও তার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলে তারা ভয়ে চিৎকার করলে তারা মা-মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। পরবর্তীতে ঘরের দরজা খুলে দিলে চাঁন মিয়া ও আয়নালসহ অন্যান্য সহযোগীরা দেশিয় অস্ত্রসহ ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিশোরীর মা সহ ঘরে উপস্থিত সকলের হাত,পা ও মুখ বেধে ফেলে। এরপর তারা ঘরের ভিতর মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ক্ষোভে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় কিশোরীকে তাদের বাড়ির পাশে একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে কিশোরীর মুখ ওড়না দিয়ে পেচিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে কিশোরীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেখে এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে কিশোরী ও তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে একটি স্পিনিং মিলে চাকুরির সময় থেকে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ডাকাত চক্রটি গড়ে তুলে। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূলতা-গাউসিয়া এলাকায় বাসের হেলপার ও রিক্সা চালাতো। আব্দুল্লার অন্যতম সহযোগি মতিন ডোকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে সিএনজি চালাতো। সিএনজি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে ডাকাতির পরিকল্পনা আব্দুল্লাহকে প্রদান করতো। এছাড়াও সে তার সিএনজি দিয়ে ডাকাতির পূর্বে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেত এবং ডাকাতি শেষে চক্রের সদস্যদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রুত পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর মাধবদী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। চাঁন মিয়া ও আয়নাল ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে যথাক্রমে বাস ও সিএনজি চালাতো। তারা আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতো। চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় কারাভোগ করেছে এবং আয়নালের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন এই র্যাব কর্মকর্তা।