নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গৃহবধূ শান্তা ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। কিন্তু আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের ধারণা পুলিশ অভিযুক্তদের আইনী সুবিধা দিতে নিহতের পরিবারের কাছ থেকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা নিয়েছে।
সোমবার (৮ জানুয়ারী) রাতে নিহত গৃহবধূ শান্তার মা নূরবানু বেগম বাদী হয়ে শান্তার স্বামীসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন । যার মামলা নং- ৪(১)২৪। ধারা ৩০৬ পেনাল কোড -১৮৬০।
নিহত গৃহবধূ শান্তা ইসলাম বন্দর থানার ৭/১ কদম রসুল এলাকার নজরুল ইসলামের মেয়ে। মামলার আসামীরা হলো- বন্দর থানার দক্ষিণ লক্ষণখোলা পাগলীরবাড়ি এলাকার সাহাবুদ্দিন মিয়ার ছেলে ঘাতক স্বামী ও কথিত যুবলীগ নেতা আরিফ চৌধূরী (৩৮) নবীগঞ্জ ইসলামবাগ এলাকার মৃত নশু মিয়ার ছেলে সাহিদ (৪৫) ও দক্ষিণ লক্ষনখোলা এলাকার সাহাবুদ্দিন (৬০)।
এর আগে গত রোববার (৭ জানুয়ারী) রাত ১০ টা থেকে হইতে গত সোমবার (৮ জানুয়ারী) দুপুর পৌনে ২টার মধ্যে যে কোন সময়ে বন্দর থানার ২৬৫/ উইলসন রোডস্থ কদম রসুল কলেজস্থ জৈনক আফতাব উদ্দিনের ভাড়াটিয়া বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে এ বিষয়ে আইনজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু নিহতের পরিবারের অভিযোগ তাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে সেহেতু পুলিশ অভিযোগকারীদের কাছ থেকে একটি জিডি এন্ট্রি করে রাখতে পারতো। পরে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে জিডিটি ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হতো।
আর হত্যার আলামত না পাওয়া গেলে জিডিটি অপমৃত্যু মামলা হিবেসে গণ্য হতো। কিন্তু ৩০৬ ধারায় পেনাল কোডে মামলা গ্রহন করায় ময়নাতদন্তের পওে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে মামলাটিকে ৩০২ ধারায় রপান্তর করা খুব জটিল প্রক্রিয়া। তাছাড়া ৩০৬ ধারায় মামেলা রেকর্ড হওয়ায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও প্রবাহিত হতে পারে বলে বাদী পক্ষ মনে করছে।
মামলার তখ্য সূত্রে জানাগেছে, বন্দর থানার দক্ষিন লক্ষনখোলাস্থ পাগলীর বাড়ী এলাকার সাহাবুদ্দিন মিয়ার ছেলে কথিত যুবলীগ নেতা আরিফ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে গত ১লা অক্টোবর ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে সাহাবুদ্দিন মিয়ার কুপরামর্শে পাষন্ড স্বামী আরিফ চৌধূরী বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য শান্তাকে মারপিট করে। সে সুবাধে শান্তার সংসারে প্রায় সময় ঝগড়া বিবেদ লেগে থাকত।
অপর আসামি সাহিদ এর সাথে বাদিনী মেয়ে শান্তা ইসলামের ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক থাকায় তার নিকট শান্তার কিছু ছবি থাকে। পরবর্তিতে সাহিদ শান্তার স্বামী আরিফকে ছবি গুলো দেখিয়ে শান্তা দম্পত্ত্রি সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে। এনিয়ে আরিফ চৌধূরী বিভিন্ন সময়ে শান্তাকে মারপিট করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়।
গত রোববার রাত ১০টায় আরিফ ২৬৫নং উইলসনরোডস্থ কদম রসুল কলেজের পশ্চিমপাশের জৈনক আফতাব উদ্দিনের ভাড়াটিয়া বাড়িতে ঝগড়া করে শান্তাকে বেদম মারধর করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
পরবর্তিতে আরিফ তার স্ত্রী শান্তা ইসলামের মোবাইল ফোনে ফোন করলে ফোন রিসিভ না করায় সে তার উকিল মা রোমানকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তার পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারী) দুপুর পৌনে ২টায় উকিল মা রোমানা আক্তার শান্তার মাকে ফোন করে জানায় স্বামী আরিফ চৌধূরীর সাথে শান্তা ইসলামের ঝগড়া হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে দুপুর আড়াইটায় শান্তার মা ও তার ছোট বোন রাবেয়া আক্তার দ্রুত বাদিনী মেয়ের ভাড়াটিয়া বাড়িতে এসে তার মেয়ে শান্তা ইসলামের ঝুলান্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে সংবাদ দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে গৃহবধূর ঝুলান্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘাতক স্বামীসহ অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বন্দর ফাঁড়ি উপ- পরিদর্শক শামীম আল মামুন জানান, আসামীরা পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যহত আছে।