নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পদ-পদবীদের অনেককেই চিনেনা নেতাকর্মীরা

সিদ্ধিরগঞ্জে বিতর্কিত ও অপরাধীদের নিয়েই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, তোলপাড়

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৩০, ২ আগস্ট ২০২৩

সিদ্ধিরগঞ্জে বিতর্কিত ও অপরাধীদের নিয়েই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি, তোলপাড়

নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১ থেকে ৯টি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নেতাকর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মন্তব্য করেনে।

 

এসব কমিটি নিয়ে চলছে বিতর্ক ও সমালোচনা। এমনকি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরাও হয়েছেন প্রশ্নবিদ্ধ, তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ক্ষোভ।  


নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও সম্মেলন নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক ও আলোচনা সমালোচনা।

 

দলে মাদক কারবারি, বিভিন্ন মামলাসহ হত্যা মামলার আসামি, কিশোর গ্যাং লিডার মাদকসেবক সহ বিভিন্ন অপরাধের জড়িতরা স্থান পেলেও অবমুল্যায়িত হচ্ছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা। 


তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্ন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিভাবে নাসিকের ৯ টি ওয়ার্ডের এধরনের কমিটি ঘোষণা করেন।  


নব গঠিত ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দ ও যুবলীগ ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্য করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জের প্রান পুরুষ জননেতা ও প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। 


নারী নেত্রী মনিরা সুলতানা ফেসবুকে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন, আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা তিন পুরুষ খোঁজখবর নিয়ে কমিটি দিতে বলেছেন। 


সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নয়টি ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেকের ক্ষেত্রে দুই পুরুষ ও যাচাই-বাছাই করা হয় নাই। আবার এক ব্যক্তি একই কমিটিতে দুইটা করে পদ উপহার হিসেবে পাইছেন! অন্য যারা আছেন তাদের জন্য কি উপহার আছে? তা হলে কেন শুধু শুধু সিএস, এসে, আর এস, দেখতে বলেন ?


এদিকে আলোচনা চলছে হত্যা মামলার আসামি, কিশোর গ্যাং লিডার, বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মে অভিযুক্তদের নিয়ে গঠিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটিগুলো।


এঘটনায় ওয়ার্ড কমিটির শীর্ষ পদে আসার জন্য দীর্ঘ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যারা কাজ করেছেন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে  মৌখিক ইন্টারভিউ দিয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 


অন্যদিকে, কমিটি ঘোষণা করা এবং কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় এই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে এবং কমিটির পদ পাওয়া অনেক নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করে বলছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিনিনা এরা কারা। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা।


সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে এই পকেট কমিটি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি করছেন ঘোষিত কমিটিগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত। 


এছাড়াও অনেক ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিনেননা বলে অনেক কর্মীরা মন্তব্য করেছেন। 


নবগঠিত ১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া এক ব্যক্তি  আব্দুল জব্বার শিবলু তার এ পদ দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন,  ২০১৬ সাল হতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। 


২০১৮ সাল হতে ১নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগ করি। সেই থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সংগঠিত করে যাচ্ছি। এ ওয়ার্ডে আমি তিলে তিলে সংগঠিত সৃষ্টি করেছি।

 

২০১৮ জাতীয় নির্বাচন, ২০২০ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং করোনা কালীন সময় সহ সকল প্রোগ্রামে দলের স্বার্তে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছি (আজ নিজেকে অযোগ্য মনে হচ্ছে)। 


তিনি আরো মন্তব্য করেছেন ১নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির সম্মানিত সভাপতি এবং সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক কে আমি চিনি না যদি কেউ চিনে থাকেন দয়া করে উনাদের ব্যাপারে জানাবেন। 


আমার রাজনৈতিক অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যারা কমিটি দিয়েছেন তারা আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং আমার পোষ্টাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।


এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদ্য অনুমোদিত ৯ টি ওয়ার্ড কমিটির ৭ টি ই ত্রুটিপূর্ণ। তৃনমূল হতাশ! আর মাত্র ৬ ও ৪ নং ওয়ার্ড কমিটির পুর্ণাঙ্গ আর বাকি অন্যান্য ওয়ার্ড কমিটি দেওয়া হয়েছে আকংশিক কমিটি।


তৃনমূল কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেন নাসিব ২নং ওয়ার্ড এ মনে হয় ধান্দা বেশি হবে তাই বোধহয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ২ জন কে দিছে ওরে পিনিক। কর্মীরা  মন্তব্য করেছেন।

 

প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে এলাকা এলাকায় হট্টগোল। স্থানীয় নেতাদের পাত্তা দেননি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ!! মূল্যায়ন করা হয়নি ত্যাগীদের!! পকেট ভারীরাই প্রাধান্য পেয়েছে!!!


এদিকে ত্যাগী তৃনমূল নেতৃবৃন্দরে সূত্রে জানা যায় তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেন নাই, আওয়ামী লীগের কোন মিটিং-মিছিলে দেখা যায় নি, দলীয় কোন আন্দোলন সংগ্রামেও কোন নেতা কর্মীদের সাথে দেখা যায় নি বলে মন্তব্য করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ সহ ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা।


সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আওতাধীন ওয়ার্ড কমিটি অনুমোদন করে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই কমিটি নিয়ে আমাদের দ্বিমত রয়েছে।


অপরদিকে আল আমিন মিলন নামে একজন মন্তব্য বরেছেন, মাদকাসক্ত, শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার আসামীদের কিভাবে ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়, আমরা বুঝতে পারি না।
 মিলন আহমেদ বলেন, ৩ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক পদ পার্থী নাহিদুল ইসলাম নাহিদকে কে ১নং ওয়ার্ডে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হইছে, সেরা হইছে। 


মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, গাজাখুরি একটি কমিটি হয়েছে একজনের নাম কয়েকবার আসছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে। এরকম বিতর্ক ও সমালোচনার আরো অনেক মন্তব্য রয়েছে।


নবগঠিত ৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২নং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাদল তার পদ দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, আমি অবাক, হতবাক, মর্মাহত, বিরক্ত! ওয়ার্ড কমিটি তে আমার নাম টি দেখে, এই কমিটির বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নাই।

 

কিন্তু কে বা কাহারা আমার নামটি আমার অনুমতি না নিয়ে কমিটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আমি তা জানিনা। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে বলিতেছি এই কমিটির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত নই।


গত সোমবার (৩১ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটি।


পদ প্রত্যাশী অনেকেই এই কমিটিকে পকেট কমিটি হিসাবে অভিহিত করেছেন এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।


নবগঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির এক সভাপতি, এক সাধারণ সম্পাদক, এক সহ-সভাপতি, এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এক সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। আবার ওনেক ওয়ার্ডে কমিটিতে এক ব্যক্তি দু-টি পদ পেয়েছেন।


আর কিছু নেতরা নিজের বলয় সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সাথে গোপনে এই পকেট কমিটি করেছে।


সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোতাহের হোসেন মনা ফেসবুকে মন্তাব্য করেন, আমাদের প্রান প্রিয় নেতা একেএম শামিম ওসমান এমপিসহ দলীয় সকল নেতারাই বলেছেন যে, কমিটি দেওয়ার আগে বলেছিলেন সিএস, এসএ, আরএস দেখে কমিটি দিতে কিন্তু তা দেওয়া হয় নাই।

 

তাই আজ সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটা তৃনমুল কর্মিরা তাদের ফেইসবুক পোস্টে তীব্র নিদ্রা জানিয়েছে এবং আমিও জানাই। 


 মাত্র ৯ টি ওয়ার্ডের কমিটি করতে এত এত ভুল তা আমাদের জন্য লজ্জা জনক। আপনার নির্বাচনি এলাকা হিসেবে ওনাদের কিসের এত পাওয়ার যে আপনার কথা অমান্য করে হাইব্রিড ভরা কমিটি দিতে।

 

আমি এর তীব্র নিদ্রা জানাচ্ছি, আজ সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডের তৃনমুল দের একটাই দাবী অতি তারাতাড়ি কমিটি বিলুপ্ত করে আবার স্বচ্ছ এবং দলের ত্যাগী কর্মিদের কমিটি দেওয়া হউক। 


তৃনমূল নেতাকর্মীরা বলেন, মনগড়া কমিটি ঘোষণা এবং কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের এই কমিটি মেনে নিতে পারছি না। তাই এই পকেট কমিটির বিলুপ্ত চাচ্ছি।

 

এমন ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হলো এটার কারন কি? অনতিবিলম্বে আমরা এই বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত চাচ্ছি। তা নাহলে আমরা পদ বঞ্চিত নেতারা এই কমিটিকে রাজপথে প্রতিহত করব।


এই কমিটি একপেশে যা দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝিকে পার করা সম্ভব না। নাকি দলে ভেতর একটি দন্ধের সৃস্টি।

 

আর তা না হলে গণহারে দল থেকে পদত্যাগ করার হিড়িক পরে জেতে পারে। আগে মুশতাক ছিলো হাতে গুনা কয়েক জন এখন মুশতাকরা অজস্র জন আওয়ামীলীগ কে ধ্বংস করার জন্য! 


এ ওয়ার্ড কমিটিতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত এসব শীর্ষ স্থানে পদ পাওয়া ব্যাক্তিদের কাছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বের পতাকা কতটুকু নিরাপদ? এটিই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার মাঝে।

 

তৃনমূলের দাবি নেতৃত্বের হাত হউক দলের অনুগামী, ত্যাগী, সৎ, নিষ্ঠাবান ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক।