নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৩ নভেম্বর ২০২৪

ফতুল্লায় ভাঙ্গারী ব্যবসা ঘিরে শক্তিশালী অপরাধ  চক্র, ছত্রচ্ছায়ায় মাদকাসক্ত ছিচকে চোর

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:২৫, ২ মার্চ ২০২৩

ফতুল্লায় ভাঙ্গারী ব্যবসা ঘিরে শক্তিশালী অপরাধ  চক্র, ছত্রচ্ছায়ায় মাদকাসক্ত ছিচকে চোর

ফতুল্লাঞ্চলে ভাঙ্গারী ব্যবসার অন্তরালে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী অপরাধ চক্র। ভাঙ্গারী ব্যবসা পরিচালনায় বা মালামাল কেনা-বেচার ক্ষেত্রে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা লালন-পালন করছে হাজারেরও বেশী মাদকাসক্ত ছিচকে চোর। প্রশাসন সবকিছু জেনেও এদের ক্ষেত্রে রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছে এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।


পুলিশ, বিশেষ পেশার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে এরা দিনকে দিন এরা  হয়ে উঠছে  বেপোরোয়া। অসাধু ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের কারনে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ছিচকে চোরদের সংখ্যা। এসকল ছিচকে চোরেরা হচ্ছে মাদকাসক্ত। 


মাদকের টাকা সংগ্রহে তারা বিভিন্ন স্থান ও বাসাবাড়ি থেকে চুরি করে তা ভাঙ্গারী দোকানগুলোতে নিয়ে গিয়ে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করছে। এসকল চোরদের আবার অগ্রিম টাকা ও দিয়ে থাকে ভাঙ্গারী দোকানীরা।


স্থানীয় প্রশাসনে নাকের ডগায় এসকল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠেছে।


এছাড়া ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের দাপা, পাগলা, রেল লাইন শিবু মার্কেট, নন্দলালপুর, দেলপাড়া, ফতুল্লা রেলস্টেশনসহ  বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা ভাঙ্গারী ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গারী দোকানী ও সিন্ডিকেট সদস্যরা নাম মাত্র অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় মাদকসেবী, বখাটে যুবক ও ছিচকে চোরদের কাজে লাগিয়ে এবং তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন বাসা বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন প্রকার লোহার মালামাল, টিন, ষ্টিল, তামা, পেপার, বই, এল্যুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও টায়ার,নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারী জাতীয় দ্রব্য চুরি করিয়ে তা কম দামে ক্রয় করে বিশাল মজুদ গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল-কারখানায় বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।


এ পেশায় ফতুল্লাঞ্চলে প্রতিটি ভাঙ্গারী দোকানের সাথে প্রায় ৩০/৪০ শিশু-কিশোর এবং নারীরা জড়িত কোন লোন ক্ষেত্রে সংখ্যা আরো বেশী। এছাড়া রয়েছে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টি ভাঙ্গারী মালামাল ভাঙ্গার কারখানা। এদের মূলত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।


তথ্য মতে, ফতুল্লা থানা এলাকার পুলিশ লাইন সংলগ্ন গড়ে উঠা জেলার সর্ব বৃহৎ লোহার মার্কেটে ভাঙ্গারী দোকানীরা তাদের মালামাল বিক্রি করে থাকে। মার্কেটটিতে প্রকাশ্যে এ সকল মালামল বেচাকেনা হলেও প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি।তাছাড়া পাগলা এলাকায় ভাঙ্গারী ব্যবসার অন্তরালে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। 


এরা মালবাহী পরিবহন থেকে চুরি করে বিভিন্ন মালামাল। পাগলা মেরী এন্ডারসন সংলগ্ন দুটি দোকানে এবং তালতলা এলাকায় চারটি দোকানে একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেচাকেনা করা সহ অপরাধিদের শেল্টার দিচ্ছে।স্থানীয় নেতা- পাতি নেতা, বিশেষ পেশার একাধিক জন, অসাধু পুলিশ কর্মকতারা এদের নিকট থেকে নগদ অর্থ নিয়ে সকল প্রকার সহোযোগিতা করে আসছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।


সূত্রটির মতে পাগলা মেরী এন্ডারসনের গেইট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে পুলিশের সোর্স জাফর ওরফে জুয়াড়ী জাফর,আয়েত আলী, হাবুল্লাহ, ভোলাইয়া কালু সিন্ডিকেট, তালতলা এলাকায় নজরুল মারা যাওয়ার পর তার ভাঙ্গারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে সুমন , সোর্স আক্কাস, জাহাঙ্গীর আলী, হাবু ডাকাত,রাকিব, চোর রিপন সিন্ডেকেট,ফতুল্লা রেল স্টেশন, আলীগঞ্জ জোড়পুল, মাদ্রাসা সড়ক এলাকায় ভাঙ্গারী  ব্যবসা একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ডিসান ওরফে চোর লা ডিসান,ফতুল্লার বালুর ঘাট এলাকায় ফালান অন্যতম।


জানা যায়, ভাঙারি ব্যবসায়ীরা তাদের নিযুক্ত ফড়িয়া-হকার কিংবা খুচরা ক্রেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সিন্ডিকেট সদস্যরা রাতের অন্ধকারে টিউবওয়েলের মাথা, লোহার পাইপ, গাড়ীর যন্ত্রাংশ, নতুন-পুরাতন রড, সরকারী-বেসরকারী দপ্তর কিংবা আবাসিক এলাকায় পরিত্যাক্ত পড়ে থাকা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এসে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে রাতভর।

 

স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করে এ ভাঙ্গারী ব্যবসাটি খুবই লাভজনক বিধায় ফতুল্লার শিল্পাঞ্চলের আনাচে-কানাচে, পাড়া- মহল্লার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাঙ্গারী দোকান।


ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু জানায়, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এদের প্রতি নজরদারী করা হচ্ছে। অতি দ্রুত তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে।