সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় চাঁদা চেয়ে না পেয়ে একটি কোম্পানির ম্যানেজারসহ ৪ জনকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বাবুর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেছেন জসীমউদ্দিন বেপারী নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি পেশায় ট্রাকচালক।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৭ মে) রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপুর বাজার এলাকায় অবস্থিত কাশ্মীর স্টিল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড থেকে কোম্পানির একটি পণ্য বোঝাই ট্রাক ছেড়ে যায়। সেটি কাঁচপুরের সোনাপুর এলাকায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবুর বাড়ির সামনে আসলে তার সহযোগীরা
ট্রাকটির গতি রোধ করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাবুর সহযোগী মুমিনুল ওরফে মমিন-মনিরসহ ৭-৮ জন। তাদের হাতে লাঠিসোটা ছিল।
পরে তারা ট্রাক চালক জসিমউদ্দিন বেপারীকে নামিয়ে পাশে একটি ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে কাশ্মীর স্টিলের ম্যানেজার মোখলেছুর রহমানকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভুক্তভোগীকে ছাড়িয়ে নিতে ফোন করেন নির্যাতনকারীরা।
ফোন পেয়ে কোম্পানির ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান, শরীফ সরকার ও হিসাবরক্ষক তানভীর ঘটনাস্থলে গেলে টাকা না পেয়ে তাদেরও আটকে রেখে শক দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে থাকা নগদ ১৭ হাজার ৭০০ টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয় এ সময়।
এ ঘটনার পর বিষয়টি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যান। তার আগে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা না দিলে সোনাপুর এলাকায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কোনো ট্রাক চলাচল করতে পারবে না বলে হুমকি দেন তারা। পরে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
আহত ট্রাক চালক জসীমউদ্দিন বেপারী জানান, তিনি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে অন্যান্য কোম্পানির হয়ে ট্রাক চালান। ঘটনার রাতে ভাইস চেয়ারম্যান বাবুর সহযোগী মমিন-মনিরের নেতৃত্বে লোকজন তার ট্রাকের গতিরোধ করে টর্চার সেলে ৪ জনকে আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকার জন্য নির্যাতন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্প কোম্পানির মালিক অভিযোগ করেন, ভাইস চেয়ারম্যান বাবু তার কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি মাসে মাসোহারা চান। না দিলে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার সহযোগীদের দিয়ে কোম্পানির লোকজনকে মারধর করেন। এভাবে নির্যাতন ও চাঁদা চাওয়া হলে কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে তাদের।
এ ব্যাপারে কথা হলে ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। গত শনিবার পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করেছে। এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের বিষয়ে মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অতি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।