সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। এরপর মন দেওয়া-নেওয়া। কিছুদিন পর একান্ত সময় কাটাতে প্রেমিকার বাসায় যাওয়া। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ও মাদককারবারি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা। তখনি পুলিশ সেজে বাসায় প্রবেশ করে চক্রের অন্য সদস্যরা। সবশেষে মানসম্মান রক্ষায় তাদের চাহিদা পূরণ করেই মুক্তি মেলে প্রতারণার শিকার প্রেমিকদের।
এভাবেই স্ত্রীকে দিয়ে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতেন স্বামী। স্ত্রী ও বিভিন্ন মেয়েদের নাম দিয়ে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বামী। এরপর মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের টার্গেট করে নারী পরিচয়ে কথা বলা শুরু হয়। ফেলা হয় প্রেমের ফাঁদে। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে প্রতারণা।
এমন অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ খুঁজে পায় ভয়ঙ্কর এক প্রতারক চক্রকে। এ চক্রের এক সদস্য নিজের স্ত্রীকে দিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করতো। চক্রটি এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে বাসায় ডেকে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।
সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডা ও মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চক্রের চার সদস্যকে। তারা হলেন- প্রতারক দম্পতি মো. টুটুল ও নাসিমা আক্তার এবং তাদের সহযোগী মো. মোশারফ হোসেন শুভ ও আবজল মিয়া।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, টুটুল-নাসিমা দম্পতি মিলে তৈরি করেছিল প্রতারণার সাম্রাজ্য। তাদের বাসা বাড্ডা এলাকায়। ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে মধ্যবয়সী পুরুষদের প্রেমের ফাঁদে ফাঁসাতেন নাসিমা। ফেসবুকে প্রেমের পর ভিডিওকলে কথা বলার পর শুরু হয় মূল প্রতারণা। ভিডিওকলে কথা বলার পর নাসিমা তার বাসায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এরপর একান্তে সময় কাটানোর কথা বলে নিয়ে যেতেন বেডরুমে। সেখানে গোপন ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করা হতো। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত এমন প্রতারণা করে আসছিলেন তারা।
আপত্তিকর অবস্থায় থাকার সময় পরিকল্পনামাফিক পুলিশ পরিচয়ে হাজির হতেন নাসিমার স্বামী টুটুল। সঙ্গে থাকত সাংবাদিক পরিচয়ধারী আরও কয়েকজন। সবশেষে মানসম্মান রক্ষায় তাদের চাহিদা পূরণ করেই মুক্তি মেলে প্রতারণার শিকার প্রেমিকদের।
সম্প্রতি এভাবেই এ চক্রের কাছে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন একজন। তিনি প্রতারকদের পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাকে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো তারা। এ ধরনের আরও একটি ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত ২৫ জন। গ্রেফতার টুটুল অপকর্মের জন্য স্ত্রীকে ব্যবহার করতেন। মধ্যবয়সী প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের টার্গেট করতো তারা। ভুক্তভোগীরাও তাদের ফাঁদে পা দিতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতারকরা ধারণ করা ভিডিও ভিকটিমের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই ভিকটিমকে মারধর করে এবং তার কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নিত। এছাড়া ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিত প্রতারকরা। ভিকটিম আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের সব দাবি মানতে বাধ্য হতো।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, আমরা অতীতের মতো আবারও অনুরোধ করবো, যাচাই-বাছাই না করে কারো ফাঁদে পা দেবেন না।