শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার সাড়ে ১১ বছর” শিরোনামে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে বৈঠকে আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ, জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সিপিবির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বিশিষ্ট আইনজীবী এড. সুব্রত চৌধুরী, কবি, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, কবি, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি সাংবাদিক হালিম আজাদ।
বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, শামীম ওসমানদের জন্ম হয় লুটপাট-দখলদারত্ব থেকে। এগুলো যদি বন্ধ না হয়, তাহলে নতুন নতুন শামীম ওসমান তৈরি হবে। আর বিগত সরকারের পুরোনো চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তিনি তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, মোসারাত জাহান মুনিয়া, সোহাগী জাহান তনু এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত করার আহ্বান জানান।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, সেলিনা হায়াৎ আইভী দীর্ঘদিন যে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন করলেন তাকেও শেখ হাসিনা কিংবা শামীম ওসমানের মতো মানুষের সঙ্গে যদি এভাবে পাইকারি হারে মামলা দেওয়া হয়, তাহলে পুরো বিচার বা মামলার প্রক্রিয়া নিয়েই মানুষের মধ্যে সংশয় বা সন্দেহ তৈরি হবে। এর গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ত্বকী হত্যা একটি দেশব্যবস্থার প্রতীক। দেশব্যাপী সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। ত্বকী হত্যা হোক বা জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থান দমাতে হত্যাকাণ্ড হোক, সবই ছিল ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে।
তিনি বলেন, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হলে বলতে হবে, আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। এখন যা হচ্ছে, তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা; লুটপাটের ভাগ-বাঁটোয়ারা হচ্ছে। এই পতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
খালেকুজ্জামান বলেন, মানুষের মধ্যে বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আগের ঘটনাগুলো দিয়ে বিচার শুরু হলে মানুষের মধ্যে এ আস্থা ফিরবে যে সরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারা প্রতিহিংসার পথে চলবে না।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, গত ১৫ বছরে বিচারহীনতাই ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ত্বকী হত্যার বিচারের পথের বাধা দূর হয়েছে, এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সরকার যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
বিচার পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, খুনিদের রক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা। এখন আমরা আশা করছি এই সরকার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ত্বকীসহ তনু, সাগর-রুনি হত্যার বিচার করবে।
আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, এই সরকারকে সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে। ত্বকী হত্যার বিচারের গুরুত্বের উপরেই নির্ভর করছে এই সরকার কোর পথে হাটবে।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় গত পনের বছর শামীম ওসমান তার আত্মীয়-স্বজন, দলীয় ক্যাডার বাহিনীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি মাফিয়া গোষ্ঠী তৈরি করেছে। তারা হত্যা, ভূমিদখল, সরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাট-ঘাট-বাজার দখল, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, মাদক ব্যবসা ইত্যাদির মধ্যদিয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি ওসমানীয় মাফিয়া-সাম্রজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে শেখ হাসিনা সহ তার সহযোগী নারায়ণগঞ্জের এই মাফিয়াগোষ্ঠী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশের পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজকে জুলাই শহীদদের হত্যার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্বকী, সাগর-রুনী, তনু সহ ওসমান পরিবার দ্বরা সংঘটিত নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিৎ করবে।