হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া ‘কথিত’ দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার আইনজীবী ও সরকারি কৌসুঁলি অ্যাডভোকেট রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হেফাজত নেতা মামুনুল হক মিথ্যা বলেছে। সে ধর্ষণ মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেনি বরং মামুনুল ধর্ষণের ঘটনা ধামা চাপা দিতে আদালতে চিৎকার চেচামেচি করার চেষ্টাও করেছেন।
বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে দীর্ঘ সময় সাক্ষ্য দেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।
সাক্ষী দেয়ার সময় মুখের হিজাব খুলতে বলায় কাঠগড়ায় উপস্থিত মামুনুল হক ঝর্ণাকে বলেন, ‘শরীয়তের হুকুম হিজাব খোলবানা ঝর্ণা’। এতে ঝর্ণা একবার হিজাব খুলে বিচারককে মুখ দেখিয়ে ফের হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন।
পরে সোয়া ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সাক্ষ্য শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ঝর্ণাকে জেরা করেন।
স্বাক্ষ্যগ্রহন শেষে সরকারি কৌসুঁলি অ্যাডভোকেট রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের একটি রুমে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাত আরাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগে দুই বছর ধরে তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করছিলেন আসামি।
আদালতে বাদী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বারবার প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, মামুনুল হকের স্ত্রী জান্নাত আরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে ৪১ বার প্রশ্ন করে জেরা করেছেন, কিন্তু বাদী প্রতিবার বলেছেন, তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
জেরাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামুনুল হকের স্ত্রী জান্নাত আরাও এটা প্রমাণ করতে পারেননি। এই মামলার ৪৩ সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ দেবেন।
তিনি জানান, আদালতে মামলার বাদী তার জবানবন্দি দেয়ার পর আসামী পক্ষের আইনজীবি বার বার তাকে নানা প্রশ্ন করে বিরক্ত করে তোলার চেষ্টা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও জানান, মামুনুল হক তাকে কোথায় নিয়ে ধর্ষণ করেছেন তা বলেছেন মামলার বাদী। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রোয়েল রিসোট ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে মামুনুল তাকে ধর্ষণ করেছে তা আদালত কে জানিয়েছেন ঝর্ণা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও মামুনুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দিয়েছেন।
মামলাটি রাষ্ট পক্ষ গুরুত্ব দিয়ে আদালতে উপস্থপন করছে। এ কারনে আসামী পক্ষের আইনজীবী নানা অহেতুক প্রশ্ন করে মামলার বাদীকে বিভান্ত করার চেষ্টা করেছে। আদালত ঝর্ণার জবানবন্দি শেষে মামলার পরবর্তী সাক্ষগ্রহনের দিন ধার্য করেছেন আগামী মাসের ১৩ ডিসেম্বর।
ধর্ষণ মামলায় কাশিমপুর কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় সকাল ৯ টার দিকে মামুনুলকে আদালতে আনা হয়। এসময় মামুনুল হকের অনুসারীরা আদালত চত্বরে অবস্থান নেয়। মামুনুল কে আদালত তোলার সময় অনুসারীরা পিছু পিছু ছুটতে থাকলেও পরে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখে।