নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ব্যবসায়ি নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের পক্ষে দ্বিতীয় দিন আদালতে যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও তৈমুর আলম খন্দকার ষড়যন্ত্র করে জাকির খানকে মামলার আসামি করেছেন।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল ইসলামের আদালতে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। তবে নিরাপত্তা জনিত কারণে আসামি জাকির খানকে আদালতে আনা হয়নি।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, সাব্বির আলম হত্যা মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় ২২ জন সাক্ষ্য দিয়েছে। সেসব সাক্ষীদের কোথায় কোথায় ত্রুটি রয়েছে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে এই মামলায় সন্ত্রাসী বা আততায়ী যারা হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আসামি হিসেবে তাদের নাম আসেনি। সেকারণে এই ঘটনার পেছনে কে বা কারা ইন্ধন দিয়েছে ও ষড়যন্ত্র করেছে তা এখন দেখার বিষয়। সেক্ষেত্রেও বাদী পক্ষ কেউ কিছু বলতে পারেনি ও উপস্থান করতে পারেনি। তাছাড়া ঘটনার সময় ও ঘটনার পরে জাকির খান বিদেশে ছিল। শত্রুতাবশত ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন তাকে মামলার আসামি করেছেন। সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও খোরশেদ আলম এই মামলায় তাকে আসামি করার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তবে খোরশেদ আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন, কে বা কারা তার ভাইকে হত্যা করেছে তা তিনি জানেন না। কারা তাকে হত্যা করেছে সেটা জনগণ জানে। কিন্তু জনগণ তো আর সাক্ষী দিতে আসবে না। বাকি সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা কেউ বলতে পারেনা কোথায় কি জব্দ করেছেন। সুতরাং আমাদের আসামিকে নির্দোষ দাবি করছি। আশা করি, জাকির খান খালাস পাবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমাদের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিকর্ত করবে। যদি রাষ্টপক্ষ আমাদের কিছু বলে সেক্ষেত্রে আমরা রিপ্লাই দেবো।
সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন কিভাবে ষড়যন্ত্র করেছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের নাম ছিল এই মামলায়। কিন্তু তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। মূলত গিয়াসউদ্দিন ও তৈমুর আলম খন্দকার এই ষড়যন্ত্র করে তাকে আসামি করেছেন।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান বলেন, নিরাপত্তা জনিত কারণে জাকির খানকে আদালতে আনা হয়নি। মামলাটির যুক্তিতর্ক হয়েছে। আশা করি, আগামীকাল যুক্তিতর্ক শেষ হবে।
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে জাকির খানকে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক দিদার খন্দকার বলেন, জাকির খানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষানিত মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তৈমুর আলম খন্দকার যখন তার দলে নেতাকর্মীতে বেড়াতে পারেনি, তখন পরিকল্পিতভাবে সাব্বিরকে খুন করে সেই মামলায় জাকির খানের নাম জড়িয়েছেন। অথচ জাকির খান ঘটনার সময়ে বিদেশে ছিলেন। ফলে তিনি এই মিথ্যা মামলা থেকে অচিরেই মুক্তি পাবেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুই দফায় জাকির খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করেছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার । এ হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এবং নিহতের বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার বাদী হয়ে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নামে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামি উল্লেখ করা হয়।
এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। নারাজি পিটিশনে তৈমূর আলম বলেছিলেন, ‘গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন।’
এরপর থেকে ৫ বছরের অধিক সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নেন। নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।