দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আরমাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও তেমন একটা জমে ওঠেনি নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের প্রচার-প্রচারণা। অধিকাংশ প্রার্থীদেরই দেখা যায় না নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। যার ফলে নিরুত্তাপ ভোটের মাঠ। এ আসনগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ- ২ (আড়াইহাজার), নারায়ণগঞ্জ- ৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ও নারায়ণগঞ্জ- ৫ (শহর ও বন্দর)।
প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত এই তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণা ও তাদের অনুসারীদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তিনটি আসনে সাঁটানো ব্যানার পোস্টারের সবই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অন্যদলের প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার তেমন একটা চোখে পড়েনি।
নারায়ণগঞ্জ-২ ও ৪ আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলেও হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নেই। তবে নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারে রয়েছে জাতীয় পার্টি মনোনিত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের ওই তিনটি আসনের সাধারণ ভোটাররা জানেন না কোন দলের প্রার্থী ক’জন। নির্বাচন নিয়েও ভোটারদের মধ্যে নেই তেমন কোনো আগ্রহ। জমছে না চায়ের আড্ডাও। ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের জন্য মাঠ অনেকটা খালি।
নির্বাচনে বিএনপিসহ ভোট পাওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো বিরোধী দল অংশ না নেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটররা।
নারায়ণগঞ্জের এই তিনটি আসনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী না থাকায় এই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা পোস্টারিং মাইকিং নেই। ফলে এই আসনে নির্বাচনের কোনো উত্তাপ বা আমেজই পাওয়া যাচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ -২ আসনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু এবং নারায়ণগঞ্জ -৫ আসনে বিকেএমইএর সভাপতি বর্তমান সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ -৫ আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী দেওয়ায় তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিনজনই হেভিওয়েট। বাকী অন্য দলের প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে তারা সবাই নবাগত।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচার-প্রচারনা ও মতবিনিময় সভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নজরুল ইসলাম বাবু, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। শুধু প্রার্থীরা না তাদের দলীও নেতাকর্মীরাও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারনা ও উঠান বৈঠক করে ভোট প্রার্থনা করেন এবং ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
ভোটাররা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য দলগুলো অংশ না নেয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরফলে ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম থাকায় তাদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে বলে অভিমত অনেক ভোটারের।
তারা বলছেন, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কয়েকজনকে ছাড়া কাউকেই চিনি না। কোনো দিন এলাকায়ও তাদেরকে আসতে দেখিনি। এই প্রথম তাদের নাম আপনার কাছ থেকে শুনেছি।
এরূপ প্রেক্ষাপটে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীদের। অনেকটা সহজ জয়ের মধ্যেও ভোটার সমাগম নিয়ে ঘাম ঝরানোর চেষ্টা রয়েছে প্রার্থীদের।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচজন প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টির আলমগীর সিকদার লোটন লাঙ্গল, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবু হানিফ হৃদয় সোনালি আঁশ, জাকের পার্টির মো. শাহজাহান গোলাপ ফুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফুল ইসলাম ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে সরকার দলীয় প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু একাই নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। প্রতিদিনই প্রচার- প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার বিপরীতে তৃনমুল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও তারা ঢিলেঢালা ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ আসনে সরকার দলের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু জয়ের ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী হলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে চিন্তিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন।
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১১৭টি ও বুথ ৭৩১টি। এবার নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ভোটার বেড়েছে ৪৭ হাজার ৭৯৮ জন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নৌকা, জাকের পার্টি থেকে মুরাদ হোসেন জামাল গোলাপ ফুল, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে মো. হাবিবুর রহমান চেয়ার, তৃণমূল বিএনপি থেকে আলী হোসেন সোনালি আঁশ, সুপ্রিম পার্টি থেকে মো. সেলিম আহমেদ একতারা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শহিদ উন নবী আম, বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে গোলাম মুর্শেদ রনি ডাব, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে মো. ছৈয়দ হোসেন মশাল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনী প্রচারে তৎপর রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। প্রতিদিনই তিনি ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটারদের জাগ্রত করতে এবং ভোট কেন্দ্রমূখী করতে।
শামীম ওসমানের বিপরীতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাত প্রার্থী থাকলেও সেভাবে প্রচারে নেই। অনেকটা নীরব রয়েছেন তাঁরা। ফলে আসনটিতে একতরফা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এই আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৯৪ হাজার ২০৭ জন। এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ভোটার বেড়েছে ৬১ হাজার ৫৮৫ জন। ভোটকেন্দ্র ২৩১টি ও বুথ ১ হাজার ৫৬২টি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। তাদেও মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে একেএম সেলিম ওসমান লাঙ্গল, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এড. মো. আব্দুল হামিদ ভাসানী ভূঁইয়া সোনালি আঁশ, ইসলামী ফ্রন্ট থেকে এএমএস একরামুল হক চেয়ার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ছামছুল ইসলাম একতারা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এ আসন স্বতন্ত্র ও সমামনা দলগুলোর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ নেই ভোটের মাঠে। তৃণমূল বিএনপি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের, জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী থাকলেও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব নেই এখানে। ফলে রাজনীতির মাঠে যেমন উত্তাপ নেই তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝেও।
এ আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৯৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১৭৫টি ও বুথ ১ হাজার ৯২টি। এবার এই আসনে ভোটার বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৮৩ জন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ এ আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে সব সময়ই অবহেলিত থাকে বলে মনে করেন ভোটরারা। যদিও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা বরাবরই বলে থাকেন, আওয়ামী লীগের জন্মস্থান এই নারায়ণগঞ্জ।
সেই নারায়ণগঞ্জের এই আসনে গত ৩৭ বছরের মধ্যে মাত্র একবার নৌকা বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী না দেয়ায় ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।