আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আপাতত নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ১১ জন প্রার্থী। তারা হলেন, কায়সার হাসনাত (আওয়ামী লীগ), লিয়াকত হোসেন খোকা (জাতীয় পার্টি), মো: মজিবুর রহমান মানিক (বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন), মোহাম্মদ আসলাম হোসেন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান (বিএনএম), নারায়ণ দাস (বিকল্প ধারার বাংলাদেশ), এরফান হোসেন (স্বতন্ত্র), মারুফ ইসলাম ঝলক (স্বতন্ত্র), মো: আরিফ (মুক্তিজোট), রুবিয়া সুলতানা (স্বতন্ত্র), এ.এইচ.এম মাসুদ (স্বতন্ত্র)।
এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কায়সার হাসনাত ও জাতীয় পাটির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে আলোচনা ডালপালা ছড়াচ্ছে। যদিও আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মারুফ ইসলাম ঝলক ও এরফান হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কিন্তু তাদের নিয়ে ভোটের মাঠে তেমন আলোচনা নেই। সোনারগাঁয়ের মানুষের কাছে যত আলোচনা কায়সার হাসনাত ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে ঘিরে।
সূত্রমতে, মহাজোটের প্রার্থী হয়ে গত ১০ বছর ধরে এই আসনের এমপি জাতীয় পাটির কেন্দ্রী নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা। মহাজোটের প্রার্থী হওয়ায় নৌকার ভোটও তার বাক্সে গিয়েছে। কিন্তু সেখানকার আওয়ামীলীগ বার বার দাবি জানিয়ে আসছে সোনারগাঁয়ে এবার যেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী দেয়া হয়। নেতারা দলীয় বিভিন্ন কর্মসুচিতে তাদের বক্তব্যে জাতীয় পাটির এমপির সমালোচনা করে বলেছেন, জাতীয় পাটির এমপি থাকার কারণে সোনারগাঁয়ে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠন। তাই তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল সোনারগাঁয়ে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য। সবশেষ গত ১৩ অক্টোবর সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে আওয়ামীলীগের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সোনারগাঁয়ের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এখানে জাতীয় পার্টির এক এমপি আছেন। তিনি আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছেন। এটি জাতীয় পার্টির সিট নয়। এই এলাকাকে ও এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে এখানকার মানুষ নৌকা চায়। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টির ভাইয়েরা বড় বড় কথা বলেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করে দেখেন কয়টি সিট পান। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের দাবির প্রেক্ষিতে ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে আনন্দে মেতে উঠে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ১০ বছর পর আসনটি আবার আওয়ামীলীগের দখলে আসবে। ইতমধ্যে সোনারগাঁয়ের সর্বত্র আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে নৌকার পক্ষে।
তবে দু:চিন্তা দেখা দিয়েছে জাতীয় পাটি তথা লিয়াকত হোসেন খোকার শিবিরে। বিগত দিনে মহাজোটের কারণে পরপর দুইবার এমপি হয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সেখানে জাতীয় পাটির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক ছিল না। ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভোটাররাও তাকে ভোট দিয়েছেন। এবার চিত্র ভিন্ন। কারণ মহাজোট ঠিক থাকলেও এবার সোনারগাঁয়ের আসন জাতীয় পাটিকে ছাড় না দেয়ার সম্ভবনা বেশি দেখা যাচ্ছে। যার কারণে এখানে সরাসরি নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ নৌকার প্রার্থী বহাল রাখলে লাঙ্গলের প্রার্থী কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে। কারণ নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমান সময়ে লাঙ্গলের উঠে আসা সম্ভব কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন সোনারগাঁয়ের মানুষ।
তাই জাপার স্থানীয় নেতাদের ভরসা এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নয়। ভরসা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা মনে করছেন শেখ হাসিনার দয়া হলেই খোকার তরী আবার ভাসবে, না হয় ডুববে। কারণ মহাজোটকে যদি এবারও আসনটি ছাড় দেন প্রধানমন্ত্রী, তাহলে লিয়াকত হোসেন খোকা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হবেন। আর ছাড় না দিলে দ্বিতীয়বারের মতো আব্দুল্লাহ আল কায়সার সংসদ সদস্য হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সমাধান কি হবে তা জানতে সোনারগাঁবাসীকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওইদিন মনোয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তাছাড়া ওইদিন আওয়ামীলীগের সঙ্গে জোটের আসন ভাগাভাগি হবে।