দুর্ধর্ষ প্রতারক ও টাউট কামাল প্রধান কারাবন্দি হলেও তার সহযোগিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কামাল প্রধানের সহযোগিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগিরা। তারা বলছেন, কামাল প্রধানের সহযোগিরা নানা অপকর্ম অব্যাহত রেখে নিরিহ-নিরপরাধ মানুষকে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সহযোগিরা বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি অফিসে কখনো ফোন দিয়ে কখনো আবার নিজেদের সরকারী সংস্থার ভুয়া বিশেষ ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে ব্লাকমেইল করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এই চক্রটিকে আএনর আওতায় আনা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তাদের দ্বারা হয়রানীর শিকার ব্যক্তিরা।
এদিকে চিহ্নিত প্রতারক ও বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী প্রতারক কামাল প্রধানকে ডান্ডাবেড়ি পড়া অবস্থায় ২৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা হয়। অন্যান্য মামলায় হাজিরার পর তাকে পুনরায় জেল হাজতে প্রেরণ করেন আদালত।
জানা যায়, জাল দলিল সৃজন, চেক জালিয়াতি, চাকুরী, বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও রাষ্ট্রবিরোধীসহ নানা অভিযোগ উঠে বন্দর থানাধীন বাগবাড়ী এলাকার কামাল প্রধানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও সংখ্যাও কম নয়। নারী কেলেঙ্কারিসহ বিশিষ্টজনদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অপপ্রচারকারী হিসেবেও রয়েছে কামালের যথেষ্ট পরিচিতি। সরকার অনুমোদনহীন কয়েকটি পত্রিকারও সম্পাদক-প্রকাশক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা তার মূল পেশা। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে চাঁদা না পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানী করে আসছিল। একজন মামলাবাজ হিসেবেও কামালের পরিচিতি ছিল যথেষ্ট। প্রায় ১৫টির মতো নামে বেনামে ফেইক ফেসবুক আইডি খুলে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষের সম্মানহানীসহ প্রতারণা ও প্রলোভনের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত সে ও তার সহযোগিরা। কামালের কয়েকজন সহযোগী বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁও, ফতুল্লা ও সদর থানা এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ অব্যাহত রেখে বিভিন্ন মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ব্লাকমেইল করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কামাল প্রধানের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মিনারবাড়ী এলাকার মোঃ নুরুজ্জামানের ছেলে মনির হোসেনের কাছ থেকে ৩ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রয়ের নিমিত্তে বায়না নামা দলিল সম্পাদন করা বাবদ ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেয় একই থানার বাসিন্দা বাগবাড়ী এলাকার আবুল প্রধানের ছেলে প্রতারক কামাল প্রধান। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী মনির হোসেন ৪২৮৭ নম্বরের দলিলটি খোজ খবর নিয়ে দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগী মনির হোসেন টাকা ফেরত চাইলে বাটপার কামাল তালবাহানা করলে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ঘ’ অঞ্চল আদালতে কামালের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা দয়ের করেন। মামলা নং-১২০/১৯। এরপর সুচতুর কামাল উল্টো বাদী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের করে। কিন্তু দীর্ঘ ধৈর্য্যরে পর অবশেষে সি আর মামলা নং-৫৯৮/২০১৯ ও সিআর ১২০/১৯ এর মামলায় গত ২০ সেপ্টেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত এর বিচারক মোহাম্মদ শামছুর রহমান মনির হোসেনের পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং প্রতারক কামালকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ড বিধির ৪২০ ধারায় এক বছরের সাজা ও ৫ হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত করেন অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন আদালত। বর্তমানে প্রতারক কামাল প্রধান নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে। প্রতারক কামাল প্রধান আটক হওয়ার খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
উল্লেখ্য যে, প্রতারক কামাল প্রধানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলায় একটিতে ৮ মাসের সাজা, আরেকটিতে ৬ মাসের সাজাসহ আরো একটিতে ৬ মাসের সাজা প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ আদালত। বর্তমানে প্রতারণার মামলায় ১ বছরের সাজায় দন্ডিত হয়ে জেল হাজত বাস করছে। ২৯ অক্টোবর সকালে কারাগার থেকে কয়েকটি মামলায় হাজিরা দিতে ডান্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয় তাকে। পরে হাজিরা শেষে আদালত থেকে আবারও কারাগারে প্রেরণ করা হয়।