রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় নিহত আবু সাঈদ হত্যার বিচার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ সারাদেশে হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫ টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলার সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্ত্তী, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, জেলা কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদ, সিপিবি নেতা ইকবাল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়ন জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা চৈতি।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসংগত সংস্কারের দাবি মানার ঘোষণার পরিবর্তে সরকারের উস্কানীমূলক আচরণ ও বক্তব্যে এই সংকট তৈরি হয়েছে। মন্ত্রীদের নির্দেশেই পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে হামলা, নারীদের ওপর হামলা অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছে, যা ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে জায়নবাদী ইসরাইলের হামলাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে টার্গেট করেই হামলা চালায়। আজ রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা মিলিতভাবে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদকে।
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি হামলায় আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উস্কানীমূলক বক্তব্যে নির্দেশিত হয়ে এই হামলা সংগঠিত হয়েছে।
প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে হামলা ও পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়ার পরও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ ‘কোটা’ সংস্কারের ন্যায্য আন্দোলন দমনে সরকারের এই সন্ত্রাসী পদক্ষেপ ও সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়াতে সচেতন দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা আর আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানোর এই অপচেষ্টা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাতির গর্বিত অর্জন, মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেষ্ঠ সন্তান, একে বিতর্কিত করা যাবে না, সরকার মুক্তিযুদ্ধের নামে ব্যবসা করছে এবং সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন-লুটপাট, অর্থপাচার এর বিরোধিতা করলে এবং ছাত্র-জনতা তাদের অধিকারের দাবি করলে তাদেরকে ‘রাজাকার’ ট্যাগ লাগিয়ে গণআন্দোলন দমন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আজ বগুড়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, ঝিনেদা, সিলেট, রংপুরসহ সারাদেশে বাম জোটের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশী হামলার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশ-ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে একজন ছাত্রকে হত্যা ও সারাদেশে সহস্রাধিক ছাত্রকে আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ছাত্র হত্যাকারী সন্ত্রাসী পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ গতকাল রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসভবনে অবস্থারত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশী হামলা ও আহত হওয়ার ঘটনারও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ দমন-পীড়ন-নির্যাতন ও হামলা মামলার পথ পরিহার করে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার বিচার এবং কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় যে ভয়াবহ পরিণতি হবে তার দায় সরকারকে বহন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ সরকারি সন্ত্রাস, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এবং ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন উচ্ছেদে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকল বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তিসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বাম নেতৃবৃন্দ আজ সর্বশেষ পাওয়া খবরে ঢাকা চট্টগ্রাম রংপুরে চলমান আন্দোলনে ছাত্র-লীগ ও পুলিশের হামলায় ৫ জন নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও হামলাকারীদের বিচারের দাবি করেন।