নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২২ নভেম্বর ২০২৪

শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে শোক র‌্যালী ও দোয়া মাহফিলে

শাব্বির আলম খন্দকারের খুনিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৪:৪০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শাব্বির আলম খন্দকারের খুনিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি

আজ রবিবার (১৮ ফ্রেবুয়ারি) শহীদ সাব্বির আলম খন্দকারের ২১ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। দিবসটি স্বরণে ও শহীদ সাব্বিরের খুনিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করাসহ ১৮ ফ্রেবুয়ারিকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষনার দাবিতে শহরে সমাবেশ ও শোক র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সাব্বির আলম খন্দকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হত্যাকারীদের ফাঁসি ও নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশ শেষে শোক র‌্যালী বের হয়। শোক র‌্যালিটি নিয়ে মাসদাইর সিটি কবরাস্থানে গিয়ে শহীদের কবর জেয়ারত শেষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস, সাহাবুদ্দিন খন্দকার, শেখ মোঃ আমান, জয়নাল আবেদীন, আবুল কালাম আজাদ, মনোয়ার হোসেন শোখন, আইনজীবি নেতা এড. হামিদ ভাসানী, এড. বোরহান উদ্দিন সরকার, রানা মজিব, জুুয়েল রানা, নাজমুল কবির নাহিদ, শওকত খন্দকার, আক্তার হোসেন খোকন শাহ, জুয়েল রানা, সুমন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মোক্তার হোসেন, ফয়সাল মোল্লা, মোঃ শহিদ, মুসা, রানা মুন্সি, ওসমান গনি, সাইদুল, জুলহাস। 

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ হল সন্ত্রাসের অভ্যায়ণ। ২০০৩ সালের ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও ৪২টি প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা হয়েছিলো। সেখানে জুট সন্ত্রাস মাদক সহ সমাজের বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে বক্তব্য রাখেন শাব্বির আলম খন্দকার। ওই সভায় অনেক বড় ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন, তারা কিছু বলেনি। শাব্বির বিকেএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যও ছিলেন। 

ওই সময় ও দাড়িয়ে বলেন, আমার জানাযায় অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য শুরু করছি। ওই তিনি, সন্ত্রাস ঝুট সন্ত্রাস সহ বিভিন্ন অপরাধ তুলে ধরেন। এতে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন এ্যাকশণ শুরু হয়। এর জের ধরে শাব্বিরকে হত্যা করা হলো। তাকে এই হত্যা কারণে আপনারা প্রতি বছর স্মরণ করেন।

বিকেএমইএ নিয়ে তৈমূর বলেন, হত্যার পর বিকেএমইএ থেকে আমাদের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিতে চেয়েছিল। আমরা সেই টাকাটি গ্রহণ করেনি, বলেছি তাকে (শাব্বির) সম্মানটুকু করবেন। আমরা টাকাটা চাই না। 

দুঃখের সহিত বলতে চাই, বিকেএমএইএ সভাকক্ষে শাব্বির আলম খন্দকারের নাম রাখা হয়েছিলো। তাকে উৎসর্গ করে তার নামে রাখা হয়েছিলো। আমি জানতে পারলাম, সেই নামটি এখন উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। বিকেএমইএ’র নতুন ভবনে তার নামকরণে সভাকক্ষ রাখা হয়নি। 

আমি সেলিম ওসমান এমপির সাথে কথা বলেছি, আমরা আপনাদের কাছ থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা চাই না। শাব্বির গার্মেন্টস মালিকদের ঝুট সন্ত্রাসীদের হাত থেকে গার্মেন্টস মালিক বিকেএমইএ সদস্যদের রক্ষা করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছে। আপনারা নতুন ভবনে শাব্বিরের নামটি পুনরায় স্থাপন করুণ। 

চেম্বার অব কর্মাসে কাছে অনুরোধ করেছি, আপনারা শাব্বিরে ছবি স্থাপন করুণ। আগে চেম্বারে শাব্বিরের ছবি ছিলো, এখন সেই ছবিটি নেই। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে শাব্বিরে জীবন গেলেও তাকে সম্মান না করলে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হবেন।

তিনি আরও বলেন, মাদক ইভটিজিং সন্ত্রাস চাঁদাবাজ নগরে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি কয়েকবার বলেছেন, মাদক নিমূল করবেন। এই দেশ থেকে মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজমুক্ত করতে হলে শাব্বিরের নামে শপথ নেন। তিনি যেভাবে আন্তরিকভাবে চেয়েছিলো, আপনার সেভাবে করুণ। শুধু লোক দেখানো ও পত্রিকায় কভারেজ নেয়া জন্য হলে মাদকমুক্ত হবে না।

এর আগে নিহত শাব্বির আলম খন্দকারের মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা  বলেছেন, আমার বাবা হত্যা বিচার হবে। আসামীরা বার বার তারিখ দিয়ে বিচার দেরি করছে। আসামী বলেছে, তারা দেশে বাহিরে ছিলো। কিন্তু হত্যাটি বিশেষ পরিকল্পিত ছিল, তারা পরিকল্পনা মতামতে দেশের বাহিরে থেকে হত্যা করেছে আমার বাবাকে। তিনি আপনাদের সুশৃঙ্খল নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন।

১৮ ফ্রেবুয়ারিকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষনার দাবি করে বক্তারা বলেন, আজ যেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে সরকার সহ দেশবাসী কথা বলছে, সেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে শহীদ শাব্বির আলম খন্দকার নব্বইয়ের দশক থেকেই সোচ্চার ছিলেন।

তিনি মাঠ পর্যায়ে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় মাদক ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের চক্ষুসূলে পরিনত হন। সমাজের ও দেশের চিন্তা করেই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েও তার হত্যার বিচার পাইনি তার পরিবার। 

উল্লেখ্য, সাব্বির আলম খন্দাকার গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সাবেক সহ সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন। মৃত্যু তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসেরও সহ-সভাপতি ছিলেন।

২০০২ সালের ২২ শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস, চাঁদা ও মাদক মুক্ত করার কালে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসে অনুষ্ঠিত জেলার ৩২ টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর মত বিনিময় সভায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার “আমার জানাযায় অংশ গ্রহন করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শুরু করছি” বলে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের গডফাদারদের নাম প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্দে জিহাদ ঘোষনা করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্ঠা করেন।

তখন শহীদ সাব্বিরের ব্যাপক তৎপরতায় ঝুট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, চুন ফ্যাক্টরী ও নারায়ণগঞ্জবাসী নিস্তার লাভ করে।

চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা হয়ে পরলে তাদের গডফাদারদের ষড়যন্ত্রে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা  প্রাতঃকালীন ভ্রমনকালে শহীদ সাব্বির আলম খন্দকারকে গুলি করে হত্যা করে।

তৎসময়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা দায়ের থেকে শুরু করে তদন্ত সহ সকল ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে বলে স্বজরা বলছেন। তাদের দাবি একারনেই ২১ বছরেও এ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি।