সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, বিচারহীনতা ও কর্তৃত্তবাদী শাসন দেশকে আজ ভয়াবহ পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। বিচারব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নাই। মৃত্যু হলে বিচার হয় না। ঘাতক চিহ্নিত হলেও সাড়ে নয় বছরে ত্বকী হত্যার বিচার হয় না। শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিচারহীনতাকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বেও বিচারহীনতার এমনি নজির ছিল না। জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার শপথ নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে, তারা আজ পদে পদে শপথ ভঙ্গ করে চলেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে।
তিনি বলেন, শামীম ওসমান তার ভাড়া করা সাংবাদিক ও আইনজীবিদের মাঠে নামিয়ে ত্বকী হত্যা নিয়ে ‘জজমিয়া’ নাটক সাজাতে চাচ্ছেন। কিন্তু ত্বকী হত্যার যারা তদন্ত করেছেন, তারা এখনো জীবিত আছেন। পুলিশ-র্যাবের কেউই মারা যান নাই। সুতরাং এ সব নাটক করে লাভ হবে না।
তিনি ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চন, বুলু, মিঠু সহ সকল হত্যার বিচার দাবি করেন। চার বছর আগে নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু সাদমান সাকির উদ্ধার দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার সাড়ে নয় বছর উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ বলেন, সাড়ে আট বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা যেহেতু সরকার দলীয়, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছে, সে কারণেই এ বিচার হচ্ছে না।
দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ হয়ে আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ হত্যার বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, শামীম ওসমান আপনি যত কারসাজিই করেন ত্বকীকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। বিচার আপনার হবেই।
এসময় সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনি সুপান্থ, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।