২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় গণিতে ফেল করে নাজমীন আক্তার। আর্থিক লাভের জন্য তাকে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি করায় প্রধান শিক্ষক। নবম শ্রেণীতে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হয়ে বেতন দিয়ে রীতিমতো ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়েছে নাজমীন।
তবে স্কুল থেকে তাকে বেতন ও পরীক্ষার ফি পরিশোধের কোন রশিদ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করে ওই ছাত্রী। ফলে এক বছর পিছিয়ে যায় নাজমীন।
কিন্তু বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ অবগত করেনি নাজমীনকে। ঘটনাটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন পূর্ববাগমারা নূরবাগ (পূর্ব নিমাইকাশারী) এলাকার ‘শাহীন মডেল স্কুলে’র। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোঃ শামীম খাঁন।
বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী নাজমীন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ নাজমীনকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উল্লেখ করে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে স্কুলের বিভিন্ন সাময়িক এবং দশম শ্রেণীর প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায়।
প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় তাকে ৩ বিষয়ে ফেল দেখিয়ে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহীন মডেল স্কুলের বোর্ড পরীক্ষার্থীরা নিকটস্থ ডেমরা থানাধীন হাজী রহমত উল্লাহ ফোরকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
সে অনুযায়ী উক্ত স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাজমীনকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিষ্ট্রেশন করানো হয়েছে। সে মতে নাজমীন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে নাজমীন তার সহপাঠীদের সাথে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখছিল এবং এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছে। সে মোতাবেক আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুদের দোয়াও চেয়ে নিয়েছেন। যদিও এর সবই বৃথা। যা ২/৩ দিন আগেও জানতোনা নাজমীন।
বিষয়টি নিয়ে শাহীন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামীম খানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি নাজমীনের ফেল করা দুটি বিষয়ের খাতা এনে সাংবাদিকদের দেখান। কিন্তু নাজমীনের ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করা নিয়ে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, আমার কাজ সামনে এগিয়ে যাওয়া।
পেছনে কী হয়েছে সেটা দেখার সময় আমার নেই। তাছাড়া নাজমীন খুবই খারাপ ছাত্রী। পড়ালেখায় তার নিজের এবং পরিবারের কোন আগ্রহ নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী আমরা তাকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাতে পারছিনা।
ভুক্তভুগী ছাত্রীর মা জেসমিন আক্তার জানান, স্বামীহারা অভাব অনটনের সংসারে তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করে সংসার চালান এবং মেয়ের পড়াশোনা করান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার মেয়ের শিক্ষা জীবন ধংস করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ২ বছর আমার মেয়েকে নবম ও দশম শ্রেণীতে পড়িয়েছেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের সকল বেতন, পরীক্ষার এবং সেশন ফী সব কিছুই দিয়েছি কিন্তু প্রধান শিক্ষক গত ২ বছরে টাকার কোন রশিদ না দিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে দেবে বলে আর রশিদ দেয়নি।
অন্য স্কুলে ভর্তির উদ্দেশ্যে নাজমীনের ছাড়পত্র চাইলে স্কুলের বকেয়া দাবি করে প্রধান শিক্ষক ছাড়পত্র দেবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক শামিম খাঁন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথেও এ রকম ঘটনা ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধংস করে দিয়েছেন।