৪২তম জাতীয় বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জে দিনব্যাপি বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিজ্ঞান মেলা, বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কিউরেটর (একাডেমিক) সুকল্যান বাছাড়, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদা বারিক প্রমুখ।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই মেলায় সদর উপজেলার পঁচিশটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকবৃন্দ।
মেলায় বিজ্ঞানে পারদর্শী শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল সিটি, আধনিক শিক্ষা ও চিত্ত বিনোদন, তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে আসক্তি রোধ, আধুনিক ইটিপি প্লান্ট ও মডার্ণ এগ্রো ফার্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের তৈরি বিজ্ঞানভিত্তিক মডেল উপস্থাপন করে।
শিক্ষার্থীরা মনে করছে, বিজ্ঞান মেলার মাধ্যমে পাঠ্য জ্ঞানের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। এখান থেকে হাতে কলমে অর্জিত শিক্ষা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কল্যানে ব্যবহার করা যাবে। যা দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সহপাঠীদের দেখাদেখি প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিজে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার মানসিকতা তৈরিসহ বিজ্ঞানের প্রতি অনেকের ভীতি দূর হবে। এ কারণে মেলার পরিধি আরো বাড়িয়ে এলাকাভিত্তিক আয়োজন করতে সরকারের কাছে দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিজ্ঞান মেলার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, “তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারঃ আসক্তি রোধ” প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায় জুনিয়র ও সিনিয়র গ্রুপ মিলিয়ে সর্বমোট ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। মেলায় চমৎকারভাবে সাজানো স্টলে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে তাদের প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রজেক্টের উদ্দেশ্য এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের এই প্রজেক্ট কিভাবে কাজে আসবে তা তুলে ধরেন। এছাড়া কমর আলী হাই স্কুল এন্ড কলেজে আয়োজিত বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী (এসময় সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এবং সকলের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়) অংশ নেয়।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর কর্তৃক প্রেরিত মিউজু বাসে মেলায় আগত দর্শনার্থী শিক্ষার্থীরা 6D মুভি উপভোগ করেন। অতঃপর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং পুরস্কার বিতরণী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট বিতরণ ও অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে সনদপত্র প্রদান করা হয় এবং মেলায় আগত শিক্ষার্থীদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা ও অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপারে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় যা কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন উদ্ভাবন করে। তাদের এই সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক হবে। তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়- “থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।”
সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মেলা শেষে কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক।